বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৫, ২০১০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কত আবু বকরকে হারাবে ( দিনক েডসিটিন ১২ েফব্রুয়াির ২০১০)





ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কত আবু বকরকে হারাবে
মাহফুজুর রহমান মানিক
এসএসসিতে বি গ্রেড পেলেও এইচএসসিতে এ+। প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম সেমিস্টারেই তার বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয়। এতেই সে তৃপ্ত হতে পারেনি। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হতে প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। বর্গাচাষী পরিবার অতি কষ্টে লেখা-পড়ার খরচ চালান। পরিবারের কষ্ট দেখে ছোট ভাইকে প্রবোধ দিয়েছে, আর একটা বছর তোমরা কষ্ট কর। এরপর আমি পাশ করে বের হবো। ভালো চাকরি হবে। তোমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। আবু বকরের এ স্বপ্ন চির অধরাই থেকে গেল। মা বলেছে বাবা বাড়ি আয়, ছেলে তার টার্গেটে অবিচল। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম তাকে হতে হবে। মাকে বলেছে, ৫ম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ করেই বাড়ি আসব। অনেক দিন থাকব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। পরীক্ষার আগেই ফিরে গেছে মায়ের কোলে। আবু বকর হিসেবে নয়, লাশ হয়ে। এখন আর লাইব্রেরিতে খুঁজে পাওয়া যাবে না তাকে। পাওয়া যাবে না সেমিনারে কিংবা ক্লাসে। সুন্দর হাতের লেখা নোট খাতা আর কেউ পাবে না। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে নোট খাতা। আবু বকর পাড়ি জমিয়েছে পরোপারে। আর কোন দিন ফিরে আসবে না। ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে প্রাণ দিয়েছে। নির্মম বাস্তবতা হলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে এসে জীবন দিয়েছে। আবু বকর সিদ্দিক। কত স্বপ্ন ছিল তার। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী। টানাপোড়নের সংসারে মা তিন বছর ধরে মাথায় নারিকেল তেল দেন না, যদি এ তেলের টাকা বাঁচিয়ে আবু বকরকে দেয়া যায়। ছেলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে, অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করবে। আবু বকর ছিলেন একটি ফুটন্ত গোলাপ। সদা হাস্যময়ী, অত্যন্ত বিনয়ী। আচরণের দিক দিয়ে যার জুড়ি মেলা ভার। মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ গুণের অধিকারী এ আনুষটি সারাক্ষণ পড়াশুনা আর ভালো রেজাল্টের চিন্তায় ছিল মশগুল। একসময় টিউশনি করলে ও রেজাল্টের কথা ভেবে টিউশনি ছেড়ে দেন। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতো, যেটা তার সহপাঠীদের প্রশ্ন শিক্ষক হতে চেয়ে আবু বকর লাশ কেন? এ উত্তর কে দেবে।? একজন সম্পাদক অবশ্য উত্তর চেয়েছেন এভাবে যে প্রধানমন্ত্রী, বকরের মা বাবাকে কি বলবেন? এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। আবু বকরের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর ইন্টারনেটে বসছিলাম। ইমেইল চেক করছি, একজন ইমেইল করেছে নিরীহ একটা শিক্ষার্থী মারা গেলো, তার জন্য কিছুই করতে পারলেন না? সেদিন বুধবার ৩ ফেব্রুয়ারি, বকর মারা গেছে সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিটে, পত্রিকায় এখনো সে সংবাদ আসনি। ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ সংস্থার কেউ কেউ এ সংবাদ দিয়েছে। মৃত্যুর সংবাদে তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে চেয়েছে, ভাংচুর করেছে প্রক্টরের রুম ও কয়েকটা গাড়ি। ৩ তারিখ গেলো, পরদিন সকালেই পত্রিকার সংবাদ, প্রায় প্রত্যেকটা পত্রিকা শিরোনাম করেছে আবু বকরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে, কেউ লিখেছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যু কলংক’ কেউ বলেছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল’ আবার কারো শিরোনাম ‘ছাত্রলীগের কোন্দলে ঢাবি রক্তাক্ত’। মূল ঘটনা ১ ফেব্রুয়ারির, রাত ১টার পর ছাত্রলীগের স্যার এ এফ রহমান হলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে আহত হয়ে রাত তিনটার পর হাসপাতালে যান আবু বকর। একদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৩ তারিখ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আবু বকরের মা তখনো জানতেন না তার ছেলে আর নেই। ভাবেননি বকরের মুখ থেকে মা ডাকটা আর কখনো শুনবেন না। বিকেলে ছেলের লাশ দেখে মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। যে ছেলেকে পড়ানোর জন্য মা এতো কষ্ট করেছেন, সে কিনা আজ তার আগেই চলে গেলো, মা বিলাপ করছিলো, তোমরা আমার আবু বকরকে ফিরিয়ে দাও। আবু বকরের বাবা কিছুদিন আগেও ধার করে তার জন্য এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। সে টাকা পরিশোধের আগেই হাজির ছেলের লাশ। তার বড় ভাই। পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে ভাইকে টিউশনি করতে দেয়নি, নিজের ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে টাকা দিতো। আর ছোট ভাই যে গুনছে কবে এক বছর শেষ হবে। ভাই চাকরি করবে, অভাব থাকবে না। গোটা পরিবারের এ স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।আবু বকর কতোটা সংগ্রামী জীবন যাপন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ব্যস্ততায় ছুটি পেয়ে যখন বাড়ি যেতো, অন্যান্যদের মতো তার আনন্দ করার, আড্ডা দেয়ার, বিশ্রাম করার সময় কোথায়? পড়াশোনার খরচের চিন্তায় সে মাঠে কাজ করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও কৃষকের মতো কাজ করতে তার মনে কোনো দ্বিধা কাজ করেনি। তার এলাকায় সেই একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করতো। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই কী তার অপরাধ? তার সাথীরা মানববন্ধন করছে, তারা লিখেছে, ‘আমাকে গুলি কর’ ’আমি অনিরাপদ’, এই পড়াশোনা আমাকে খুন করতে শেখায়’ তারা প্রশ্ন করেছে, আবু বকর মরলো কেন? এ দায় কার? এ কোন বর্বরতা?আগের একটা প্রসঙ্গে ফিরছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন একজন সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রী, আবু বকরের মা-বাবাকে কী বলবেন? উত্তরটা কী আমাদের মাননীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রী দিয়েছেন? ‘তেমন কিছুই ঘটেনি, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। যদি তাই হয় তাহলে জাতি হতাশ। একজন দায়িত্বশীলের মুখ থেকে কেউ এমন বক্তব্য আশা করে না। যেখানে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের সৃষ্ট তা-বে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পড়াশোনার অবস্থা যায় যায়, ভর্তি বাণিজ্য চলছে কলেজগুলোতে, শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে। এরপরও সব স্বাভাবিক আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।গেলো বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষে ছাত্র মারা গেলেও বা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো স্বাভাবিক। এখানে ছোটখাটো সংঘর্ষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যও বন্ধ ছিলো না, কোন শিক্ষার্থীকে প্রাণও দিতে হয়নি, কিন্তু এ বছরের শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃসংবাদ। আঠারো জানুয়ারি ছাত্রদলের কোন্দলে রক্তাক্ত হয় ক্যাম্পাস, ধর্মঘটে দু’দিন বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর আবু বকরের মতো মেধাবী ছাত্র হারালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কারণটা ছাত্ররাজনীতিই।এখন ফেব্রুয়ারি, ভাষা আন্দোলনের মাস, এ মাসেই ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করেছেন, আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। তখন ছাত্রদের আন্দোলন বা ছাত্ররাজনীতি ছিলো দেশ ও মানবতার জন্য। আর এখন ছাত্ররাজনীতি ক্ষমতার জন্য। আগে ছাত্ররা শহীদ হয়েছে দেশের জন্য, এখন প্রাণ হারাচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে। তখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে পড়াশোনাও করেছে, এখন পড়াশোন তো দূরে থাক পড়াশোনার পরিবেশই বিঘিœত করছে। নেতারা বছর বছর ইয়ার গ্যাপ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখছে, আর কর্মীরা ক্লাস বাদ দিয়ে করছে প্রোগ্রাম। সিটের দৌঁড়ে ক্লাস আর পরীক্ষা অনেক পেছনে। শিক্ষকরাও করছেন রাজনীতি। দিন দিন অবনতি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান। প্রতিযোগিতার বিশ্বে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পিছিয়ে পড়ছি আমরা।৩ ফেব্রুয়ারি, যেদিন আবু বকর মারা যায়, দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকার সম্পাদকীয় ছিলো ‘ঢাবি আবার ঐতিহ্য ফিরে পাক এ প্রত্যাশা কেন নয়’। যথার্থ সম্পাদকীয়। এ প্রত্যাশা আমাদের থাকবেই। কিন্তু যেখানে আবু বকরের মত শিক্ষার্থী প্রাণ হারান আমরা একটু হলেও মুষড়ে পড়ি। তবে ভেঙ্গে না পড়ে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার রসদ পাই। এজন্যই পশ্চিমা দেশগুলো নাকি চায় আমরা যেন ইতিহাস চর্চা না করি। তারা চায় আমরা বিশ্বায়নে ডুবে থেকে তাদের অনুসরন করি। কারণ আমাদের অতীত ঐতিহ্য আমাদেরকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য, স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য বেশি আন্দোলিত করে।সম্পাদকীয়টি বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং ধরে হিসেব করেছে, র‌্যাংকিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের অবস্থান ৫৭১ তম। ২০০৮ সালে ছিলো ৫২৮তম। ২০০৭ সালে ৫২৭তম এবং ২০০৬ সালে ছিলো ৩৬৫তম। এভাবে দিনদিন এর মান নিম্নগামী হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এক সময় বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। তখন পড়াশোনার মান, গবেষণা এবং সকল শিক্ষার্থীদেরকে আবাসন সুবিধা দেয়ার দেয়ার দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের সমকক্ষ ছিলো, ফলে নাম হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। বিভিন্ন দেশ হতে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে পড়াশোনা করতো। বিশ্বব্যাপী এর মান ও ছিলো সমাদৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সে মানকে ধরে রাখতে পারেনি। আজ থেকে দশ বছর আগেও ১৯৯৯ সালে এশিয়া উইকের রেটিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিলো ৩৭, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী ছিলো সমাদৃত।এগুলো এখন ইতিহাস। ইতিহাসকে ভর করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখনি তাজা প্রাণ আবু বকরকে আমরা হারিয়েছি। আবার দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট, ছাত্র সংঘর্ষ। তাহলে আমরা বিশ্বের ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালযের সাথে কীভাবে প্রতিযোগিতা করবো। কোন বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে ছাত্ররাজনীতির কারণে পড়াশোনা নষ্ট হয়? ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ছাত্র নিহত হয়? আবশ্য আমরা কয়েক বছর আগে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গুলি করে কয়েকজন হত্যা করেছে সে সংবাদ শুনেছি। কিন্তু সে ঘটনা আর আমাদের আবু বকরের মৃত্যুর ঘটনা এক নয়। মৃত্যুর মিছিলের সূচনাটা আবু বকর নয়। সে মিছিলের একজন সদস্য মাত্র। এভাবে গত ষাট বছরে শতাধিক হত্যাকা- ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোন হত্যাকা-েরই রহস্য উদঘাটিত হয়নি। বিচার তো দূরের কথা। মৃত্যুর এ মিছিলে আর কত আবু বকরকে শরীক হতে হবে আমরা জানি না। আমরা জানি না খুনিদের আদৌ বিচার হবে কিনা। জানিনা আবু বকরের মায়ের মতো কত মায়ের বুক খালি হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়ে লাশ হবে। আবু বকরের মাকে প্রবোধ দেয়ার মতো কোন ভাষা আমাদের নেই। তবে এটাতো ঠিক আবু বকর একজন নিরীহ ছাত্র, যে প্রাণ দিয়েছে ছাত্র রাজনীতির বলি হয়ে।যারা ছাত্ররাজনীতি পুষছেন, ছাত্র রাজনীতির নামে দলবাজী করাচ্ছেন, তাদের জন্য কী কোন শিক্ষনীয় বিষয নেই? আবু বকর যদি তাদের সšতান হতেন, অনুভুতি কেমন হতো। মৃত্যুর এ মিছিল দীর্ঘ হোক এটা কেও চায়না। সময় এসেছে ভাবার, বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদেরকে তাদের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করবেন না। ছাত্র রাজনীতির সাথে দেশের রাজনীতির কোন সংশ্রব থাকবে না। কোন দল ক্ষমতায় আসলো কী না আসলো এতে ছাত্রদের কিছু আসে যায়না। হলগুলো ক্ষমতায় যারা আছে তাদের এমন কোন কথা থাকবে না। ছাত্ররা শুধু পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করার আন্দোলন করবে। তবেই আমাদের ছাত্ররাজনীতির সমাধান। অন্যথায় ধমকিয়ে, সাময়িক কমিটি বাতিল করে, কিংবা সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগ করে আদৌ সমাধান হবে না।আবু বকরের মৃত্যু সে পথে পরিচালিত করতে আমাদের মনে একটু নাড়া দেবে কী?আবু বকর সিদ্দিক মারা গেছে, তার খুনিদের বিচার করতে হবে। সঠিক তদন্ত করে তা প্রকাশ করা চাই। বকরের পরিবারকে সহযোগিতা করার যে ঘোষণা হয়েছে তা কিছুই না, তবুও সেটুকুও যেন দ্রুত দিয়ে দেয়া হয়। আবু বকরের এ এফ রহমান হলের সহপাঠীরা তার মৃত্যুতে হলের সামনে একটা ব্যানার টানিয়েছে, সে ব্যানারের শুরুটা যে কবিতাংশ দিয়ে তা উল্লেখ করে শেষ করছি- চলে গেলে তুমি কোন সুদূরেস্মৃতিগুলো রয়ে গেছে হৃদয় জুড়েদেখা কী আর হবে তোমার?নিরুত্তর প্রকৃতি শুধুই হাহাকার

জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের করণীয় ( দিনক যায়যায়িদন ০৬ িডেসম্বর ২০০৯)


http://www.jaijaidin.com/details.php?nid=164058

জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের করণীয়
মাহফুজুর রহমান মানিক
উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু। পৃথিবীর এ উষ্ণতার প্রধান কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, সিএফসি-১২ প্রভৃতির গ্যাস অধিক পরিমাণে নির্গমনের ফলেই বাড়ছে এ উষ্ণতা। ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। গরম হচ্ছে সমুদ্রের পানি। এক্ষেত্রে ইন্টার গভর্নরমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ তথা আইপিসিসির প্রতিবেদন প্রতিধানযোগ্য। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে আইপিসিসির তিনটি ওয়ার: M‡elK্কিং গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার প্রকাশ করেছে। ওয়ার্কিং গ্রুপ-১ এর পর্যালোচনা অনুযায়ী, ১৭৫০ এরপর থেকে মানুষের নানাবিধ কর্মকা-ের ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রো অক্সাইডসহ বহু তাপ শোষণকারী গ্যাসের ঘনত্ব ক্রমে বেড়েছে। ফলে ২০২০ দশকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়বে ০.৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওয়ার্কিং গ্রুপ-২ বলছে, উষ্ণতা বৃদ্ধির যে হার ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে তা বিশ্বকে নিয়ে চলেছে ভয়াবহ পরিণতির দিকে। আইপিসিসি আরো জানিয়েছে, ১৭৫০ সালের আগের সাড়ে ছয় লাখ বছরে বায়ুম-লে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল ১৮০ থেকে ৩০০ পিপিএম, ২০০৫ সালে তা হয়েছে ৩৭৯ পিপিএম, মিথেন ছিল ৩২০ থেকে ৭৯০ পিপিবি, ২০০৫ সালে তা হয়েছে ১৭৭৪ পিপিবি, নাইট্রাস অক্সাইড ছিল ২৭০ পিপিবি, ২০০৫ এ হয়েছে ২১৯ পিপিবি (পার পার্টস বিলিয়ন)। ফলে এভাবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে যা হবে তা হলো-গড় তাপ, তাপদাহ ও তীব্র বৃষ্টিপাত বাড়বে অধিক হারে। খরা টাইফুন ও হ্যারিকেনসহ মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপকতা এবং উঁচু জোয়ারের প্রচ-তা বাড়বে তীব্রভাবে। আর্কটিক ও এন্টার্কটিকার বরফ দ্রুত কমে আসবে ও গ্রীষ্মকালে তা বিলোপ পাবে। এর জন্য দায়ী কারা? দায়ী উন্নত বিশ্ব। বিশ্বব্যাংক ক্লাইমেট ডাটাবেজ ২০০৪ থেকে জানা যায়, ২০০২ সালে একজন আমেরিকান গড়ে ২০ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করেছে। অস্ট্র্রেলিয়ায় এর পরিমাণ ১৬ টন, যুক্তরাজ্যে ৯ টন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮ টন। উন্নত বিশ্বের বিলাসিতা আর শিল্পায়নই এর জন্য দায়ী। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত কার্বন গ্যাস নির্গমনে বিভিন্ন দেশের দায়ভার এবং জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচিতে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে ধনী দেশের ব্যয় সক্ষমতার মাত্রা নির্ধারণ করে অক্সফাম দাবি করেছে যে, গরিব দেশগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন ব্যয়ের শতকরা ৪৪ ভাগ বহন করতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, শতকরা ১৩ ভাগ বহন করতে হবে জাপানকে, ৭ ভাগের কিছু বেশি বহন করতে হবে জার্মানিকে, ৫ ভাগের কিছু বেশি বহন করতে হবে যুক্তরাজ্যকে, শতকরা ৪-৫ ভাগের কিছু বেশি বহন করতে হবে ইতালি, ফ্রান্স ও কানাডাকে এবং শতকরা ৩ ভাগ বহন করতে হবে স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে। উন্নয়নশীল এ বিশ্ব শিল্পায়নের নামে অধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে নিজেরা উন্নত হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি করেছে উন্নয়নশীল এবং দারিদ্র্য বিশ্বকে। উন্নয়নশীল বিশ্ব আজ মারাত্মক ক্ষতিতে রয়েছে। যার প্রকৃষ্ট মডেল বাংলাদেশ। তাই এ জলবায়ুর পরিবর্তনের যেমন দায়ী উন্নত বিশ্ব ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় সব দায় উন্নত বিশ্বের ঘাড়েই। কোনো প্রকার অপরাধ না করেই উন্নয়নশীল বিশ্ব যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তার মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের দুটি প্রধান দায়িত্ব। প্রথমটি হচ্ছে যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে তার ক্ষতি পূরণ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধকরণ। তাই এখানে ন্যায্যতার প্রশ্ন। জলবায়ু পরিবর্তনে যাদের কোনো ভূমিকা নেই সেসব ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের স্বার্থে উন্নত দেশগুলোরই উচিত প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করা। কিন্তু এ ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের আচরণ খুবই দুঃখজনক। ইউএনএফসিসির চুক্তিমতে আমরা তিন ধরনের দেশপাই ঘী১ ভুক্ত দেশ। যারা উন্নত। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ দায়ী। তাদের কাজ হলো ক্ষতিপূরণ দেয়া। ঘী২ ভুক্ত দেশ যারা উন্নত কিন্তু খুব বেশি দায়ী নয় এরাও পরোক্ষভাবে দায়ী। ক্ষতিপূরণ দেয়ার দলেই। আর শেষ হলো ঘী৩ ভুক্ত দেশ। যারা ভুক্তভোগী তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে। যেমন বাংলাদেশ। টঘঋঈঈ স্বাক্ষরিত দেশগুলোর বৈঠক অর্থাৎ ঈড়ঢ় এর বৈঠকের মাধ্যমে এগুলো স্বীকৃত। এ ব্যাপারে ঈড়ঢ় আর্টিকেল ৮-এর ৯-এ অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এসবই ছিল চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে সবচেয়ে দায়ী আমেরিকাসহ অন্য উন্নত দেশগুলোর অনেকে বের হয়ে গেছে কিয়োটো প্রটোকল থেকে, ফলে অকার্যকর হয়ে গেছে এ চুক্তি। উন্নত বিশ্বের আগের আচরণ ছিল বৈষম্যমূলক। যেখানে তারা জলবায়ুর পরিবর্তনে দায়ী করছিল উন্নয়নশীল বিশ্বকেই। বলেছেÑ তোমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এর জন্যই এ জলবায়ুর পরিবর্তন। সবচেয়ে চমকপ্রদ এক তথ্য দিয়েছেন আল গোর। তার বইয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ দায় এড়াতে যে গোপন কৌশল করেছে তা ফাঁস করেছেন। বইয়ের ৪২ নং পৃষ্ঠার (বাংলা অনুবাদ) কিয়দংশ হুবহু তুলে ধরছি- ‘১৯৯০ সালের ধরিত্রী দিবসের প্রাক্কালে বুশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হোয়াইট হাউস নীতিবিষয়ক মুখপাত্র কর্মকর্তাদের কাছে একটা গোপন স্মারক পাঠায়। যাতে আভাস দিয়ে বলা হয় যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে কার্য ব্যবস্থায় জনগণকে তাদের সমর্থন না দেয়ার ব্যাপারে বোঝানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হবে। এ ধরনের সমস্যার আদৌ অস্তিত্ব নেই এ কথা সরাসরি না বলে এ ব্যাপারে অনেক অনিশ্চিত বিষয় রয়েছে এ রকম বক্তব্য তুলে ধরা। বলা বাহুল্য, হোয়াইট হাউজের এ স্মারকটি সংবাদপত্রে ফাঁস হয়ে যায়। কাজেই হোয়াইট হাউজ দিয়ে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার মোকাবেলা যে প্রতিশ্রুতি বুশ করেছিলেন তার স্বরূপ এরকমই।’অবশ্য আজকের ধনী দেশগুলোর টনক নড়েছে। মার্কিন প্রশাসনেও বারাক ওবামার নেতৃত্ব বিশ্ববাসীর পক্ষেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ন্যায্যতা আদায়ে সোচ্চার। মালদ্বীপ যেমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তেমনি বাংলাদেশের ভূমিকাও কম নয়। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের বক্তব্যে ভূয়সী প্রশংসা করেছে বারাক ওবামাসহ বিশ্ব নেতারা। আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন এগিয়ে আসছে সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারাও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। জলবায়ুর পরিবর্তনে সবার দায়িত্ব পালনে সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দৃষ্টি এখন ডিসেম্বরের কোপেনহেগেন। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় দায় দিতে প্রস্তুত উন্নত বিশ্ব। তার ফলে বলা চলে গোটা বিশ্ব এ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ। তাই সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে ‘আমরাই পারি’ শিরোনামে লিখেছেন ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সারাবিশ্বের নেতাদের যুক্ততা ও নেতৃত্ব দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শতাধিক দেশের জলবায়ুর পরিবর্তন সম্মেলনে যোগ দেন। তার এ অংশগ্রহণ সংহতি ও দায়বদ্ধতা স্পষ্ট বার্তাবাহী। একইভাবে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা দূষণমুক্ত জ্বালানি প্রযুক্তির উন্নতি ঘটানো ও কোপেহেগেন সম্মেলন সফল হওয়া নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নরওয়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নির্গমন কমাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। বন ধ্বংসের ফলে যে নির্গমন তা প্রচুর পরিমাণে কমানোর পরিকল্পনা হাজির করেছে ব্রাজিল । নির্গমন কমাতে ভারতও নানা কার্যক্রম নিচ্ছে। বান কি মুন তার নিবন্ধে আরো উল্লেখ করেছে- ধীরে ধীরে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোপেনহেগেন সম্মেলনের কাছাকাছি চলে এসেছি। আর সে সম্মেলনের সফলতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সম্প্রতি লন্ডনে অথনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী ১৭টি দেশের (যারা বিশ্বের ৮০ ভাগ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী) এর সভায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন জানিয়েছেন, দেশগুলো এতে সম্পৃক্ত হয়ে পরিবর্তনের কোনো সমন্বিত এজেন্ডা তুলে ধরলে কোপেনহেগেন সম্মেলনের সফলতা দূরবর্তী কোনো জিনিস হবে না।’উন্নত বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তাদের দায় দিতে প্রস্তুত। সেটি যতো উপায়ে সম্ভব তা করবে। এর পাশাপাশি আমাদেরও অনেক করণীয় রয়েছে। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ জলবায়ুর অভিঘাতে বিপর্যস্ত। আমাদের প্রাণের দেশকে রক্ষা করতে হবে আমাদেরই। জলবায়ুর পরিবর্তনে আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তালিকায় আমাদের অবস্থান বিশ্ব র‌্যাকিংয়ে ১৮২তম। অথচ যে গ্রিনহাউসের নির্গমনের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণতা বাড়ছে তার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মডেল বাংলাদেশ। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্তদের বিশ্ব র‌্যাকিংয়ের চ্যাম্পিয়নশিপটি বাংলাদেশের হাতে। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডিজাস্টার রিডাকশনের মতে খাদ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশের স্থান প্রথম। আবার ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সের (জলবায়ু ঝুঁকিসূচক) তালিকায় প্রথম নামটি বাংলাদেশের। বাস্তবতাও তাই বলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রাকৃতিক দুর্যোগÑ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় তারই লক্ষণ মাত্র। ২০০৭-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। এরপর বন্যা, আবার আইলা ইত্যাদিতে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ সেলের তথ্য মতে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৯৩টি বড় বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে, ফলে প্রায় দুই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ক্ষতি হয়েছে ৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্ষার সময় বৃষ্টি না হওয়া, সমুদ্রে ঘনঘন বিপদ সঙ্কেত এসবই জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলেই হচ্ছে। এসব দুর্যোগ যেমন জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে পাশাপাশি আরো কিছু বাস্তব কারণও রয়েছে। ভৌগোলিকভাবে আমাদের অবস্থানই এ ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর উত্তরে হিমালয়। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব আর জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি জলবায়ুর পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। আমাদের সামাজিক অবস্থান আর অর্থনৈতিক অবস্থাও এর জন্য কম দায়ী নয়। এসব অবস্থা বিদ্যামান থাকতে জলবায়ুর পরিবর্তন বর্তমানের মতো এতো দ্রুত হতে থাকলে আমাদের অস্তিত্ব বাঁচানোই দায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা বাংলাদেশ আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং ৪৫ সেন্টিমিটার বা তার বেশি সমুদ্র স্ফীতির মুখোমুখি হতে পারে। ফলে স্থায়ীভাবে প্লাবিত হতে যাওয়া ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যাপক উপকূলীয় এলাকা ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চলে বসবাস এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের জন্য উপযুক্ততা হারাবে। এসব এলাকার মানুষ যে শুধু আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের কবলে পড়বে তাই নয় বরং তাদের মধ্যে অসংখ্যজন উদ্বাস্তুর কাতারে যোগদান করতে বাধ্য হবে। বিধ্বংসী বন্যার প্রকোপ বাড়লে বাড়িঘর, মাঠের ফসল, ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, টেলিযোগাযোগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুনর্বাসন ব্যবস্থাও ব্যাহত হবে। বন্যার ফলে দেখা দেবে নানা রোগ। দরিদ্র হবে হতদরিদ্র। জলবায়ুর পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিনষ্ট হবে। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হবে। কৃষি ফসলের জমি কমবে, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে তলিয়ে যেতে পারে আমাদের স্বদেশ। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রধান প্রভাব পড়বে পানি সম্পদ, উপকূলীয় অঞ্চল, কৃষি, স্বাস্থ্য, জীবনধারা, খাদ্য, বাসস্থানের ওপর। আমরা যখন এসব হতাশাচ্ছন্ন প্রতিবেদন দেখছি পাশাপাশি আমাদের আশার আলোও আছে। আশার আলোর প্রদীপটিকে প্রজ্বলিত করতে সেটি চারদিকে আলোকিত করতে আমাদের করণীয় অনেক। করণীয়র পথে আমরা ইতিমধ্যে হাঁটতে শুরু করেছি। এ পথের বাকি আরো অনেক। প্রথমত, জলবায়ুর পরিবর্তনে আমরা যে দায়ী নই আর যারা দায়ী তাদের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সাহসের সঙ্গেই তুলে ধরতে পেরেছি। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আমাদের সরকারের সে তৎপরতায় বিশ্ব বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। আমাদের এ ক্ষতির মোকাবেলা সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যে গবেষণা প্রয়োজন তার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল। আর সবচেয়ে বড় বিষয়টি অ্যাডাপটেশন তথা অভিযোজন। এর জন্য যে অর্থায়ন প্রয়োজন তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। ২০০৭-এর বন্যা আর ঘূর্ণিঝড়ের পর সে বছরের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ুর পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্বের মনযোগ আকর্ষণ করে এবং ধনী দেশের সহযোগিতার দাবিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সরকারের আগ্রহে ২০০৮ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ ইউকে কনফারেন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ এ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ আবারো উন্নত বিশ্বের প্রতি জোরালোভাবে আহ্বান জানায় গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য এবং বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অভিযোজনের ব্যয় বহনের জন্য। সে দিন বিশ্বব্যাংক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক বাংলাদেশকে সহযোগিতার দৃঢ় আশ্বাস দেন। ডাচ রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, বাংলাদেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে না। সে দিন সবাই মিলে বলেন, তারা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন। বাংলাদেশ ও ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড নামে ২০০৯-এ একটি ফান্ড তৈরি করেছে। অ্যাডাপটেশনের জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সম্মেলনে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। উন্নত বিশ্ব আমাদের ক্ষতিপূরণ দিলে সেটি যাতে যথার্থ কাজে লাগানো যায় এর নিশ্চয়তার দরকার সবচেয়ে বেশি। আমাদের প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ, মেরামত, উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ইত্যাদির কাজ সুন্দরভাবে করতে হবে। কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। এর সঙ্গে জড়িত একদিকে ৭০ ভাগ মানুষের পেশা কৃষি, অন্যদিকে ১০০ ভাগ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। ফলে এ খাতের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন সবার আগে। এ ছাড়াও সচেতনতা আমাদের অন্যতম করণীয়। সেটা হতে পারে কোনো ঝড়ের সময়ে শেল্টারে আশ্রয় গ্রহণ। কিংবা সাগরে মাছ ধরতে গেলে কোনো বিপদের আভাস পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসা, বন না কাটা। বেশি বেশি গাছ লাগানো ইত্যাদি। গ্রিনহাউস গ্যাস আমরা যতোটুকু নির্গমন করি তা জলবায়ু পরিবর্তনে তেমন কোনো ভূমিকা না রাখলেও এটি নিঃসরণ আমাদের দ্বারা যেন না হয়। কিংবা যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনা। আমাদের ঘর-বাড়ি, টিউবওয়েল লেট্রিন ইত্যাদি অনেক উঁচু করে নির্মাণ করা। যে কোনো দুর্যোগে একদল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক সবসময় রাখা। কৃষক-শ্রমিক-চাকরিজীবী ব্যবসায়ী তথা সর্বস্তরের মানুষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ। সমাজের অতিদরিদ্রদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ। যে কোনো উন্নয়ন কর্মকা-ে যেন জলবায়ুবিষয়ক বাড়তি ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাত এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি মোকবেলায় এলাকাভিত্তিক বা সময়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আজকের পৃথিবীতে কৃষি উন্নয়ন আর শিল্প উন্নয়নকে ছাপিয়ে আরেকটি উন্নয়নের কথা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। মানব সম্পদ উন্নয়নে ঐঁসধহ জবংড়ঁৎপব ফবাবষড়ঢ়সবহঃ আমরা যদি প্রত্যেকটি নাগরিককে মানব বোঝা মানব সম্পদে পরিণত করতে পারি তবে দেশের সব সমস্যা উত্তরণ সম্ভব। আর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এ মানব সম্পদ দ্বারাই সহজে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। অবশ্য দেশের তরুণ সমাজেরও এখানে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে আর আমাদের দেশে সবকিছুর আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। জলবায়ু পরির্বতন ইস্যুটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্কটই নয় বিশ্ব সঙ্কটও বটে। বিশ্বের এ বার্নিং ইস্যুর মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বই যথেষ্ট। আমরাও আমাদের করণীয় পালন করবো। আশা করছি কোপেনহেগেন ডিসেম্বরের (৭-১৮) সেদিনের জন্যই অপেক্ষা করছে যেদিন উন্নত বিশ্ব বলবে আমাদের প্রাণের এ পৃথিবীকে আমরা ধ্বংস করবো না। বাসযোগ্য পৃথিবীতে সবাই শান্তিতেই বাস করবে। আমাদের অপরাধের কারণে নিরীহ মানুষদের শাস্তি দেবো না। স্বপ্নের পৃথিবীর সত্যিকার রূপেই বাস্তবে ধরা দেবে। আর বাংলাদেশ বলবে আমরা এটাই চেয়েছি, আমাদের সবুজ-শ্যামল দেশটির সবুজ ধরে রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞ।

মাহফুজুর রহমান মানিক:

বুধবার, মার্চ ২৪, ২০১০

ছাত্র রাজনীতি না দলবাজী? (ৈদিনক েডসিটিন ২৭ জানুয়াির ২০১০)


ছাত্র রাজনীতি না দলবাজী?
মাহফুজুর রহমান মানিক
অনেকে বলেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমি একমত নই। আমি মনে করি ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে। ছাত্ররা এখন যে রাজনীতি করছে এটাকে হয়তো সবাই ছাত্র রাজনীতি বলবেন। এটা কীভাবে ছাত্র রাজনীতি হয়? এটা ছাত্র রাজনীতি নয়। ছাত্র রাজনীতি আমাদের দেশে বর্তমান নেই। এটা দলবাজী।১৮ জানুয়ারি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া সশস্ত্র সংঘাতের কথা বলি। এটা কী কারণে হয়েছে, দলবাজীর কারণেই। বিদ্রোহী গ্রুপ পদ না পেয়ে বিদ্রোহ করেছে। দলবাজীর অন্যতম নিদর্শন হলো বিএনপি ঠিক করেছে ছাত্রদলের কমিটি। বিএনপি যাদেরকে তার দলের জন্য লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে যোগ্য মনে করেছে, তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দিয়েছে। গত বছরের জুলাইতে প্রথম নতুন প্রথম চার সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করে। পরে ২০১০ এর ১ জানুয়ারিতে ১০১ জনের কমিটি গঠনের কথা থাকলেও গঠন করা হয় ১৭১ জনের কমিটি। ছাত্রদলের এ কমিটি হলেও কার্যত কেউ আত্র নন। টাকা দিয়ে, লবিং করে অনেকে কমিটিতে স্থান নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমের সংবাদ। এদের অধিকাংশই বিবাহিত। ব্যবসায়ী চাকুরীজীবিদের নিয়ে কমিটি। সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। তার বয়স চল্লিশের ওপরে। তার স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। ছাত্রদলের এ কমিটিকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের ম্যাগাজিন মজা করে লিখেছে ‘আমরা শক্তি আমরা বল, বিবাহিত বৃদ্ধ দল”। এ কমিটির ওপর ছাত্রনেতৃত্ব দেয়ার অর্থ কী-দলবাজী। ছাত্রদলের কমিটি যেমন বিএনপি করেছে তদ্রুপ ছাত্রলীগের কমিটিও আওয়ামী লীগ করে থাকে।এ দলবাজীর কারণেই শিক্ষাঙ্গণে প্রতিনিয়ত হচ্ছে সংঘর্ষ। নিহত হচ্ছে শিক্ষার্থী। বন্ধ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্র রাজনীতির নামে এ দলবাজীর চিত্র নতুন নয়। এখন তো সেটা অহরহই ঘটছে। গত বছর এ ছাত্র সংঘর্ষের সংখ্য ছিলো কয়েক শ। সংঘর্ষে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিহত হয়েছে মেডিকেলের শিক্ষার্থীসহ কয়েক জন।২০১০ শুরু না হতেই সে ধারা চালু হয়ে যায়। অস্ত্রের ঝনঝনানি বেজে ওঠে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্র মৈত্রীকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা তার অনন্য নজীর। শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। আর নিজেদের মাঝে গ্রুপ মারামারি তো লেগেই আছে।আজকে ছাত্ররাজনীতির নাম করে বড় বড় দলগুলো প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনী রাখছে। এদের নেতৃত্বে যারা আসেন তারা বড় নেতাদের অত্যন্ত স্নেহ ধন্য। এদের চলার খরচ মেটানোর ব্যবস্থাতো রয়েছেই টে-ারবাজী, চাঁদাবাজী। এগুলো ছাত্রদলবাজী।আমাদের বর্তমান এ ছাত্রদলবাজীর কারণে সরকার বদলের সাথে সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রূপও বদলে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলো হয়ে যায় সরকারী দলের। মজার বিষয় হলো বিরোধীদলের ছাত্রদলবাজী যারা করেন নিজেরাই জায়গা করে দেন সরকাররি দলকে। কারণ তারাতো জানেন সরকারি দলে থাকতে অন্যের ওপর কতোটা অত্যাচার করেছেন। আগেই হল ছেড়ে দেন। অবশ্য আগেই হল না ছাড়লে যে তাদের রক্ষা নেই সেটাও বুঝেন। সরকারি দলের ছাত্রদলবাজরাতো আরো ক্ষীপ্ত। হলে তো নয়ই ক্যাম্পাসেও যায়গা হবেনা বিরোধীদলের। ক্যাম্পাসে আসলেই মাইর। লুকিয়ে কেউ ক্লাস করলেও ক্লাস থেকে ধরে এনে হলেও তাকে উত্তম মধ্যম দিতে হবে। এভাবে ক্ষমতাসীনরা ক্যাম্পাস এবং হল থেকে অন্যদের তাড়িয়ে নিজেদের প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এতেও স্বাদ মেটে না। নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দেখা দেয় কোন্দল। একক রাজত্বে কেউ ভাগ বসাতে আসলে তার রেহাই নেই। গত বছর ঢাকা মেডিকেলের একজন মেধাবী ছাত্র এ জন্যই প্রাণ হারান। দলবাজী থাকলে এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতেই থাকবে। কোন সুরাহা হবে না।বর্তমান এ ছাত্র দলবাজী শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণতো নয়ই বরং অকল্যাণ বললেও অত্যুক্তি হবেনা। যার কারণে শিক্ষার্থী মাতা-পিতার কাছে উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে সোনার মানুষ হয়ে যাওয়ার পরবর্তে যাচ্ছে লাশ হয়ে, আহত হয় শিক্ষার্থী, লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটা নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না।দলগুলো ঠিকই এসব থেকে আয়দা লুটছে। ছাত্রদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসছে। টে-ার, চাঁদাবাজির ভাগ পাচ্ছে অনেক নেতা। মারামারিতে লেলিয়ে দেয়ার মতো সংঘবদ্ধ শক্তি পাচ্ছে। নানা কর্মসূচিতে কাজে লাগাতে পারছে। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানে নিজেদের কায়েম করতে পারছে। এসব যদি পাওয়া যায় মন্দ কিসের! পড়াশোনায় গোল্লায় যায়, যাক।শিক্ষাঙ্গণে দলাদলি থাকবে না। ছাত্রদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানিক সংগঠন থাকবে। সে সংগঠনের নির্বাচন হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। এখন ও অবশ্য ছাত্রদের ইউনিয়ন আছে, কিন্তু নির্বাচন নেই। নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। যেমন ডাকসু (ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন)। দুই দশক ধরে অচল। এভাবে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ছাত্র ইউনিয়নগুলো কয়েক বছর ধরে অচল।ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ছাত্রদের দলমুক্ত হতে হবে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর যে ছাত্র সংগঠন আছে তা আর থাকবে না। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ থাকবে না। বিএনপির ছাত্রদল থাকবে না। জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজ থাকবে না। এভাবে অন্যান্য দলের কোন ছাত্র শাখা থাকবে না। ছাত্ররা নিজেদের রাজনীতি নিজেরা করবে। তখন আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মতো ছাত্ররাজনীতির সংজ্ঞা হবেÑ ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদের জন্য ছাত্রদের কল্যাণে পরিচালিত রাজনীতিই ছাত্ররাজনীতি।এ ছাত্র রাজনীতি চালু হলে সরকার পরিবর্তনে পরিবর্তন হবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র। হল দখল করতে কেউ আসবে না। কারো ভয়ে হল ও ত্যাগ করতে হবে না। ছাত্রদের ক্ষমতার ধান্দা থাকবে না। টে-ারবাজি আর চাঁদাবাজি করতে হবে না। পড়াশোনায় সবাই মনোযোগ দেবে। ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় অতীতের কথা প্রায়ই শুনি, পড়ি। খুঁজি। ১৯৭১ এর পর আর এগুতে পারি না। ১৯৭১ এর আগের ইতিহাসই বলা গৌরবের। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ঐক্যবদ্ধ সকল ছাত্রের দৃপ্ত শপথের ফল। এরপর ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথান এর পথ ধরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১। একাত্তরের পর স্বাধীন বাংলাদেশের নেতৃত্বে যারাই এসেছে নিজেদের স্বার্থে গঠন করেছে ছাত্র রাজনৈতিক দল। ছাত্রদেরকে সবাই নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তখন থেকেই ছাত্ররা যা করে আসছে তাকে আমরা ছাত্র রাজনীতি বলতে পারি না, সেটা দলবাজী। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে দলবাজীর সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যাকা-, টে-ারবাজী, চাঁদাবাজী তখনো আজকের মতো এতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি। নব্বইয়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও ছাত্ররা ছিলো সোচ্চার। এরপর গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলো। তখন থেকেই দলবাজীর চিত্র মানুষের সামনে ভয়ংকরভাবে উপস্থিত হয়। দেদারছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় সংঘর্ষ। সে কলুষিত অধ্যায় যে শুরু হয়েছে দিন দিন তা বেড়ে আজ এক কঠিন রূপ ধারণ করেছে। এ বছরে এসে রাজশাহীতে হত্যাকা- এবং সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষ। প্রকাশ্যে অগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। আহত হয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রায় ৫০ জন।বিবেকবান মানুষ মাত্রই এ ছাত্র দলবাজী বন্ধ হোক তা চান। মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় মানুষ হওয়ার পরিবেশ চান। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্রসমাজকে তার মূল দায়িত্ব পালনের বিকল্প নেই। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের নেতৃবৃন্দের। রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র সমাজকে কীভাবে দেখতে চায়। তারা যদি চায় ছাত্ররা মারামারি করুক, নিহত হোক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক, পড়াশোনা গোল্লায় যাক। তো ঠিক আছে দলবাজী চলছে চলবে। দেশ যথা যায় যাক, আমার দল তো ঠিক আছে। আবার এরা যদি দেশের কল্যাণ চান। শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস দেখতে না চান। গবেষণাগারে দেখতে চান ছাত্রদের। দেশের উন্নতি চানÑ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। দলবাজী নয় ছাত্র রাজনীতি করবে ছাত্ররা। লেখাটা যখন শেষ করবো তখনি খবর পেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ইনস্টিটিউট শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিটের (আইইআরের) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন। পরীক্ষার আগের রাতে (২১.০১.২০২১) এ ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ভাগ্য ভালো কর্র্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করতে পেরেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা কতোটা ন্যক্কারজনক ঘটনা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটাই প্রথম প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। এ ঘটনার সাথে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে একটি ছাত্র সংগঠনের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কী তথ্য আসে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু যা ঘটে গেলো তা কীভাবে মানা যায়। এজন্য দল ক্ষমতায় আছে বলে কোন ছাত্র যাতে যে কোন খারাপ কাজের সাহস না সেটা ও বড় বিষয়। ছাত্রদের মূল রাজনীতি এ চ্যাঞ্জেময় পৃথিবীর সময়ের দাবী রাজনীতিবিদদের এ বোধোদয় আদৌ হবে কী না জানি না।

প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষা য় কিছু কথা

প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণীসমাপনী পরীক্ষা য় কিছু কথা (ৈদিনক েডসিটিন ১৩ জানুয়াির ২০১০)


মাহফুজুর রহমান মানিক
প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষাকে অনেকে বলেছেন মিনি এসএসসি। এ পরীক্ষার পথ ধরে সরকার অষ্টম শ্রেণীতেও সমাপনী পরীক্ষা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। যদি চালু হয় তাকে কী বলা হবে জুনিয়র এসএসসি? মূল কথা হলো, এসএসসির আদলে এসব পরীক্ষা হচ্ছে বলে এগুলোর সাথে এসএসসি কে জুড়ে দেয়ার চেষ্টা আর কি। এর আগে জাতীয় পর্যায়ে এসএসসি ছিলো প্রথম পরীক্ষা। ফলে কারো মেধার মাপকাঠি নিরূপনে প্রথমেই এসএসসির ফলাফল জানতে চাওয়া হয়। চাকরির ক্ষেত্রেও এসএসসির ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন ৫ম শ্রেণীতেই হচ্ছে জাতীয় পরীক্ষা। ফলে জীবনের একটা হিসাব নিকাশ বলা চলে এখন থেকেই শুরু হচ্ছে। এ বছর থেকে আবার যোগ হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা।
জাতীয় পর্যায়ের একেকটি পরীক্ষা জীবনের একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সে ধাপে আমরা আমাদের শিশুদেরকে ১০/১১ বছরেই ঠেলে দিচ্ছি। যুদ্ধ যাকে বলে। যদিও আমাদের দেশের শিশুরা ৫/৬ বছর থেকেই যুদ্ধের চ্যালেঞ্জে টিকে আসছে, নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি যুদ্ধের মাধ্যমে যার সূচনা। এটা অবশ্য রাজধানীসহ বিভাগীয় ও ভালো ভালো শহরের চিত্র। যদিও উচ্চশিক্ষায় এসব সংগ্রামে বেড়ে উঠা শিক্ষার্থীদের খুব একটা দেখা যায় না। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। ছোটবেলা থেকেই চাপের মধ্যে থাকতে থাকতে বড় হলে এরা ঢিলা হয়ে যায়। ঘুম, বিশ্রাম, খেলাধুলার সুযোগ না দিয়ে সারাদিন পড়া আর পড়া, সাথে ৩/৪ জন হাউজ টিউটরতো আছেই। এগুলো অবশ্য শহরের চিত্র। এসবের বাইরে স্বাভাবিক পরিবেশে থেকেও গ্রামের শিশুরা ভালো করছে। যা এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো।
এ সমাপনী পরীক্ষা কতোটা ভালো বা খারাপ তা পরিমাপের আগে এটা যে শহর আর গ্রামের পড়াশোনার মাঝে একটা সম্পর্ক স্থাপন করেছে তা স্পষ্ট। একটা জাতীয় দৈনিকে কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে, শহরের শিশু তার বাবাকে বলছে, বাবা আমাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দাও। কেন? কারণ আমি ফার্স্ট হতে চাই। এটি কার্টুনিস্টের নিজস্ব চিন্তা হলেও বাস্তব।
গ্রামের স্কুলেও যে পড়াশোনা হয় বা এসব স্কুলে যে মেধাবী শিক্ষার্র্থীরা পড়ছে তা বুঝা গেলো। আমাদের চিন্তা অবশ্য অন্যরকম। নামী-দামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে মরিয়া অভিভাবকরা ঠেলে দেন নিশ্চিত যুদ্ধে। আবার অনেকে লবিং এমনকি মোটা অংকের টাকা দিয়ে হলেও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। আমাদের এ চিন্তার পাশাপাশি নীতি নির্ধারনেও কিছু সমস্যা রয়েছে।
শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠান স্থাপনে পধঃপযসবহঃ ধৎবধ-এর কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকবে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরাই কেবল সে প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে অন্য কোন এলাকা বা নির্দিষ্ট এ সীমানার বাইরের কোন শিক্ষার্থী এখানে পড়তে পারবেনা। অনেক দেশে এ পদ্ধতি চালু থাকলেও আমাদের দেশ নেই। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমাদের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ই মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হতে বাধ্য।
গত বছরের মাঝামাঝি থাকেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার জল্পনা-কল্পনা চলছিলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে লেগে যায় সেপ্টেম্বর মাস। সেপ্টেম্বরের সাত তারিখের ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষার সমাপনী পরীক্ষা নিশ্চিত হয় এবং শিক্ষার্থীরা তখন থেকে প্রস্তুতি নেয়। ২১ নভেম্বর শুরু হয় পরীক্ষা। সকাল বিকাল অর্থাৎ একদিন দুই বিষয় করে পরীক্ষা হয়। একদিন দুই বিষয় করে পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন কী ছিলো? মানলাম সরকার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা না নিয়ে তার পরিপূরক হিসেবেও এ পরীক্ষা নিচ্ছে। তাই বলে আগের বৃত্তি পরীক্ষার আদলে সকাল বিকাল পরীক্ষা নেয়ারতো কোনো প্রয়োজন ছিলো না।
একেতো ঘোষণাই হয়েছে দেরিতে মাত্র দুই মাস আগে, তার ওপর আবার দিনে দুই বিষয়ের পরীক্ষা। অবশ্য এসব কারণ থাকা সত্বেও শিশুরা যে পরীক্ষায় ভালো করেছে, তা ফলাফল দেখলেই বোঝা যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার একমাসের মাথায়ই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যায় তাদের কাংখিত ফলাফল। মোট প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করলেও অংশগ্রহণ করে ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৫ জন। অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই একটা অংশ ঝরে পড়লো। এরপর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করে মোট ১৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪ জন। পাসের হার ৮৮.৮৪ ভাগ। যদিও এরমধ্যে গণিত ও ইংরেজীতে সর্বোচ্চ ১৩ নাম্বার গ্রেস দিয়ে আরো ৭ ভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করানো হয়।
পাসের হার ৮৯ ভাগ ধরলেও এখানে ঝরে পড়েছে ১১ ভাগ শিক্ষার্থী। পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রথম বিভাগ পেয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৭ জন। দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ১৫ হাজার ও তৃতীয় কিভাগ পেয়েছে ২৭ হাজার জন। অর্থাৎ ৪১.৭৭ পেয়েছে প্রথম বিভাগ, ৩৭.৯৮ ভাগ পেয়েছে দ্বিতীয় এবং ২০.২৫ ভাগ পেয়েছে তৃতীয় বিভাগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে ৩৭ হাজার ২২৫টি প্রতিষ্ঠানের সবাই পাশ করেছে। আর ১ হাজার ৯৩৭টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।
প্রাথমিক শিক্ষায় ১১টি ধারা থাকলেও দুঃখজনক হলেও সত্য তার অন্যতম ধারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গত বছরের সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। কর্তৃপক্ষ নাকি তাদের কথা ভুলে গেছে। এ বছর থেকে অবশ্য তাদেরকে অন্তভুক্ত করা হবে। ফলে এ বছর মাদ্রাসা পড়–য়া কোনো শিক্ষার্থী এসে সাধারণ ধারার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারছে না।
যাই হোক, সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সফল সরকার ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বৃত্তি দেবে। বেশ ভালো কথা।
প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষা চালু করার বিষয়ে কিছু যুক্তি দেখানো হয়েছে, ঝরে পড়ার হার কমানো, এনরোলমেন্ট বাড়ানো, আলাদাভাবে বৃত্তি ব্যবস্থা বাদ দেয়া ইত্যাদি। ঠিকই আছে, কিন্তু তাই বলে এসএসসির মতো দেশব্যাপী পাবলিক পরীক্ষার বোঝা শিশুদের মাথায় দেয়া কতটা কল্যাণের। কম টাকার মধ্যে ফরম পূরণ করা গেছে ঠিক আছে। এ পদ্ধতির খারাপ দিকও আছে। একটি দশ এগারো বছরের শিশুকে এভাবে পাবলিক পরীক্ষার দিকে ঠেলে দেয়া মানে তার মাথায় একটা বোঝা চাপিয়ে দেয়া, যা বহন করতে সে সক্ষম নয়। এ বোঝা হলো পড়ার বোঝা। তার এবং তার অভিভাবকের মাথায় শুধু পাস করার চিন্তা। ফলে শিশুর ধারণ ক্ষমতার বাইরে তাকে পড়তে হবে। গত বছর দেখা গেছে অনেক অভিভাবকই আর সন্তানকে রাত ১২টা পর্যন্ত পড়িয়েছেন। রাজধানীর ভর্তি যুদ্ধেও তাই হয়। ফলে এবার দেখা গেছে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে পরীক্ষার হলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষাসমাপনীতে ফলাফলের যে বিন্যাস তা ও শিশু সুলভ নয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ এ ভর্তির ফলাফল দেয়া হয়েছে। যে শিশু প্রথম বিভাগ পায়নি, তার মনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ পাওয়ার বেদনা থাকতে পারে, যা তাকে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই কুঁকড়ে খাবে। সাথে সাথে আজীবন তাকে তৃতীয় শ্রেণীর সার্টিফিকেট নিয়ে থাকতে হবে। এরাতো পাস করলো বলা যায়, কিন্তু যারা পরীক্ষায় পাসই করেনি তারা তো ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারছে না। সে কী করবে? আরেকবার পরীক্ষা দেয়ার প্রেষণা সে কোথা থেকে পাবে। যেখানে তার সব সাথীরা তার উপরের শ্রেণীতে পড়ছে। এদেরকে পরবর্তী ধাপে ফিরিয়ে আনা যে কষ্ট হবে তা বলা যায়। দারিদ্র পিতা-মাতার পুনরায় পরীক্ষায় অংশ দিতে দেয়ার প্রেষণা ফুরিয়ে যাবে। এবার যদিও ১১ ভাগ শিশু পাশ করেনি, একটা বিরাট অংশ এ পরীক্ষায়ই অংশ নেয়নি। এদের জন্য সমাপনী পরীক্ষা কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বয়ে আনবে। এবার আসা যাক ৮ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে। যাকে বলা যায় জুনিয়র এসএসসি। কিছুদিন হল সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানেও বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টিকে বড় করে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ৮ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা না হয়ে একেবারে সমাপনী পরীক্ষা।
৫ম শ্রেণীর চেয়ে ৮ম শ্রেণীর এ সমাপনী পরীক্ষাই যুক্তিযুক্ত। ৮ম শ্রেণীকে আমরা শিক্ষার একটা ধাপ বলতে পারি। এ বয়সে তাদেরকে পাবলিক পরীক্ষার সম্মুখীন করাই যায়। অন্যদিকে এ স্তর অধিক উপযুক্ত, কারণ এবারের শিক্ষানীতিতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির এ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হলে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা হবে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। তখন প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষা হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে এসএসসির মত এ পরীক্ষা নেয়া যায়। যার সার্টিফিকেটও জীবনের সর্বস্তরে কাজে লাগানো যাবে। এখন যেমন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরিতে ৮ম শ্রেণী পাশ করা প্রার্থী চাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা বৈধ সার্টিফিকেট প্রার্থী দেখাতে পারবে। এখন দেখা যায় অনেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা না করে ও যেকোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশের নকল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নকল শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ দেখায়। এবারের শিক্ষানীতিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পর থেকে কারিগরি ভোকেশনাল তথা বাস্তবমুখী পাঠ্যপুস্তকের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথোপযুক্ত। প্রথম শ্রেণী হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত আট বছরের শিক্ষা জীবনের অর্জন যেন তার জীবনের অর্জন হয়। অর্থাৎ ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েও সে যাতে তার পরবর্তী জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। ঠিক যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাকে ৫ম থেকে বাড়িয়ে ৮ম শ্রেণী করার প্রস্তাবনা এসেছে, একই কারণে ৮ম শ্রেণী শেষে সমাপনী পরীক্ষা নেয়া দরকার। সরকার একই সিলেবাসের কথা বলেছে। ৮ম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষায় একই সিলেবাস হরে মাদ্রাসা যাবে কোথায়? তাহলে কি গতবারের ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার মতো অষ্টম শ্রেণীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বঞ্ছিত করা হবে। এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করতে মাদ্রাসা এবং স্কুলে দুই সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। অবশ্য এ ব্যাপারে মাত্র সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সভাপতি করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের সুপারিশ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গত বছর থেকে যে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়েছে তা নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। এটা বাদ দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন অনেক অভিভাবকও। তারা মনে করছেন, ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাদ দিয়ে একেবারে ৮ম শ্রেণীতেই সমাপনী পরীক্ষা হবে। তবে যেহেতু ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে এটাকে বাতিল না করে শিশু উপযোগী কিছু সংস্কার করা যেতে পারে।

নদী বাঁচলে ঢাকা বাঁচবে (ৈদিনক েডসিটিন ১৩ জানুয়াির ২০১০)


নদী বাঁচলে ঢাকা বাঁচবে
মাহফুজুর রহমান মানিক
ঢাকার সাথে বুড়িগঙ্গার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চারশ বছরের ঢাকা বুড়িগঙ্গাকে নিয়েই। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী-এ বাক্যটির সাথে আরেকটি বাক্য চলে আসে-ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। বুড়িগঙ্গার সাথে ঢাকা, এটি বাস্তব। এখন যদি বলা হয় দশ বছর পর এটি হবে ইতিহাস। (অর্থাৎ তখন বলা হবে দশ বছর আগে ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছিলো। এখন যেমন বলে এক সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নয়, আগে ছিলো।) কেউ বিশ্বাস করবে? আমার মনে হয় বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালের আগে, কথাটি শুনে আতকে ওঠবেন। আতকে ওঠারই কথা। কারণ আমরা চাই না বুড়িগঙ্গা হারিয়ে যাক। এটি স্থান নিক ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত করুন। এই মুহূর্তে কেউ বুড়িগঙ্গা দেখতে যান। সনাক্তই করতে পারবেন না এটি নদী না অন্য কিছূ। বিশেষ করে কামরাঙ্গীর চরে বুড়িগঙ্গার তীরে প্রথম কেউ গেলে ভাববে এটি হয়তো খাল নয়তো নর্দমা। একদিকে এর সীমানা সংকীর্ণ হয়ে গেছে, দখলদাররা এর তীরে তাদের প্রভূত্ব স্থাপন করেছে। অন্যদিকে এর পানি দূষিত হয়ে কুচকুচে কালো হয়ে গেছে, চারদিকে ভীষণ দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ নদী বলার মতো দৃশ্য বিদ্যমান নেই। এ মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম। বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর আন্দোলন ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। গত বছর এ নিয়ে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজে আলোচনার ঝড় উঠে। শুধু দাবী দাওয়া পেশ আর মানব বন্ধনই নয়, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এটি। অবশেষে টনক নড়ে সরকারের। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশে অবস্থিত অন্যান্য নদী তুরাগ, বালুও শীতলক্ষাকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় নদীকে দখলমুক্ত করতে চেষ্টা করে। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৬ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে বর্জ্য ও পলিথিন অপসারণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর বাদামতলীর দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু হতে শ্যামবাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকার বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। ৬ জানুয়ারি চার মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে এ কাজ শুরু হয়। সেদিন বুড়িগঙ্গা ছিলো উতসবের নগরী। হাজার হাজার মানুষ এ কাজকে স্বাগত জানাতে নদীর তীরে ভীড় করে। কেউ অবার নৌকায় যোগ দেয় নদীর মাঝখানে। এভাবে সকলের হাততালির মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন হয়। তিন মাসের প্রজেক্টে এ কাজ চলছে। এর আগে অদালতের নির্দেশে বলা চলে সরকার নদীর তীরের অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলো। সে কার্যক্রম কতটা সফল হয়েছে বলা যায় না। তবে বাস্তবতা দেখে সে কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়েছে বললেও অত–্যক্তি হবে না। সেখানে অবৈধ দখলদারিত্বতো উচ্ছেদ হয়নি, বরং নির্মিত হয়েছে স্থায়ী অস্থায়ী দোকানপাট গুদামসহ অনেক কিছু। এখনো বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর তীর ঘিরে রয়েছে নানা স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান। শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা, দোকান, বসত বাড়ি এমনকি মসজিদ মদ্রাসাও। বুড়িগঙ্গার সীমানায় অনেকেই নিজের জমি দাবী করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। কেউ আবার বুড়িগঙ্গা ভরাট ও করছে এবং সেখানে স্থাপনাও তুলছে। এ অবস্থায় নদী কতটা অত্যাচারিত তা সহজেই অনুমেয়।সরকার বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে বর্জ্য উত্তোলনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ভালো কথা। এর মাধ্যমে এ বর্জ্যরে স্থায়ী সমান হবে কী-না। একেতো এ বর্জ্য উত্তোলনের ভালো ড্রেজার আমাদের নেই, তার ওপর আবার উত্তোলিত বর্জ্য কোথায় রাখবে তা নিয়ে রয়েছে টানা হেঁচড়া। আবার কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে বর্জ্য উঠানো হচ্ছে, সে বর্জ্য যে আবার বুড়িগঙ্গায় পড়বে না তার নিশ্চয়তা কী। অর্থাৎ যে সমস্ত কারণে বুড়িগঙ্গার পানির এ দৈন্য দশা সেগুলো চিহ্নিত করে তার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ কার্যক্রম কোন কাজ দেবে না।বুড়িগঙ্গা এতোদিন পরিণত হয়েছে বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে। এটি ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকার প্রধান স্যুয়ারেজ বর্জ্যরে আউটলেট হিসেবে। শিল্প কারখানার বর্জ্য, মেডিকেলের বর্জ্য, ট্যানারির বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, হাটবাজারের পরিত্যক্ত সামগ্রী, শিশি, বোতল, পলিথিন ইত্যাদি ফেলার স্থান হিসেবে বুড়িগঙ্গা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে নাব্যতা হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা, পানি হয়েছে সীমাহীন দূষিত। এগুলো শক্ত হয়ে জমাট বেধে কয়েক স্তর তৈরি করেছে নদীর তলদেশে। নানা প্রকার রাসায়নিক পদার্থও ভর করেছে বুড়িগঙ্গায়। বর্তমানে সেখানে মাছ দূরে থাক, সামুদ্রিক কোন প্রাণী এমনকি উদ্ভিদও নেই। এ অবস্থায় বর্জ্য উত্তোলন আর নদী খননের কাজ সময়ের দাবী, অত্যন্ত আশাপ্রদ কার্যক্রম। এ বর্জ্য উত্তোলন আর নদী খননের কাজকে ফলপ্রসু করতে, স্রোতস্বীনী বুড়িগঙ্গার আসল চেহারা ফিরিয়ে দিতে কিছু কাজ করা জরুরী। প্রথম কাজটি হবে নদী দখল মুক্তকরণ। শুধু বুড়িগঙ্গার নয় ঢাকার চারপাশের অন্যান্য নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকরণ। এ ব্যাপারে গত বছর যে কাজ হয়েছিলো তা থমকে দাঁড়ায়। ক্ষমতাবানরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এসব শক্তিমানদের বিষয়ে অনেক সময় নাক গলাতে সরকার ও নারাজ। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ জরুরী। তাই প্রথমে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে, সে সীমানায় অবস্থিত সকল অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে। এরপর এখন সরকার যে কাজটি করছে, অর্থাৎ বর্জ্য উত্তোলন। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এটি আবশ্যক। এ কাজের সফলতার জন্য, যে সব শিল্প কারখানার কারণে নদী দূষিত হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেককে বর্জ্য ফেলার জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তথা ইটিপি স্থাপনের জন্য বাধ্য করতে হবে। আজকের বুড়িগঙ্গা হাজারী বাগের যে চামঢ়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত-এ শিল্প কে দ্রুত সাভারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, মহানগরীর মানুষের জন্য বিকল্প পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরী।এসব বিষয়ের বন্দোবস্ত না করে শুধু বর্জ্য উত্তোলন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অবশ্য আশাপ্রদ, চমকপ্রদ খবর হলো প্রধানমন্ত্রী গত বছর পরিবেশ দিবসে ও সংসদে নদীর ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পরিবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মাথা ব্যথা যে কতটা তীব্র তা আমরা ডিসেম্বরের কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে ধরে নিতে পারি। যদিও অবশেষে সে সম্মেলন নোপেনহেগেন এ পরিণত হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রীর সে নজর আছে বলেই এখন কার্যক্রম চলছে এবং নদী রক্ষায় সরকারের অনেক কার্যক্রম হাতে রয়েছে। নদীর বিষয়ে রয়েছে শক্তিশালী টাস্কফোর্স। যারা নদীর সমস্যা নির্ধারণ করে তা হতে উত্তরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। বর্জ্য উত্তোলনের কাজ এ টাস্কফোর্সো নির্দেশ।বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। অথচ শুধু ঢাকা শহরের নদীই নয়, গোটা দেশের নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দেশে মোট নদীর সংখ্যা ২১০টি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নদী ৫৪টি। একদিকে দেশের নদীগুলো আমাদের দ্বারাই দখল আর দূষণে যায যায় অবস্থা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি চুক্তি নিয়ে নিয়মিত দর কষাকষি করতে হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে। কিছুদিন ধরে তিস্তা পানি বন্টন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রাকক্কালে, গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। তিস্তা পানি বন্টনের দীর্ঘদিনের ঝুলন্ত বিষয়টির একটা দফারফা হওয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে ছিল। কিন্তু এর পরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়ে দিলেন এ সফরে তিস্তা পানি বন্টন নিয়ে কিছু হচ্ছে না। ঢাকার সাথে যেমন নদীর সম্পর্ক তেমনি বিশ্বের অন্যান্য শহরের সাথে নদীর সম্পর্কে ও আমরা জানি। অবশ্য চীনের দুঃখ হোয়াংহোকে বাদ দিয়ে ল-নের কথা বললে সাথে সাথে আসবে এক সৌন্দর্য্যের আধার টেমস নদীর কথা। কানাডার টরেন্টোর কথা বললে আসবে চোখ জুড়ানো লেক অন্টারিওর কথা। আমেরিকার নিউইয়র্ক আর শিকাগো শহরের কথা বললে হার্ডসন নদী আর লেক মিশিগানের কথা বলতে কেউ ভুলবে না। অস্টোলিয়ার সিডনির মারো ডার্লিং নদীর কথা ও আমরা জানি। এগুলোর সাথে ঢাকার কথা বলরে বুড়িগঙ্গা আসবে ঠিকই কিন্তু সেটা আর নায়াগ্রার মত চোখ ধাঁধাঁনো হবে না। তুরাগ শীতলক্ষা আর বালুর কথা আসবে ঠিকই সেটি আর হবে না পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।আজকে সীমাহীন সংকটে মেগাসিটি ঢাকা। জানযট, জনসংখ্যা আর গাড়ির চাপে ঢাকা একদিকে যেমন ন্যুব্জ। আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সংকটে সংকটাপন্ন। সে অবস্থায় নদীগুলো যদি নাগরিকদের শান্তি দিতো স্বস্তিতে দাড়ানোর পথ করে দিতো তাও সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত মানুষ একটু শান্তি পেত। অথচ বাস্তবতা হল এ নদীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। একশ্রেণীর মানুষের অত্যাচারে নদীগুলোর প্রাণ যায় যায়। ঢাকাকে জেনেছে এমন একজন পর্যটককে ধরি যিনি ঢাকার সাথে বুড়িগঙ্গাকে জেনে এসেছে, ঢাকায় আসার পর। বুড়িগঙ্গা দেখার পর তার কাছে বুড়িগঙ্গাকে ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কিছু মনে হওয়ার কথা না। বুড়িগঙ্গার পানিকে আমরা যতই কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধময় কিংবা ব্যবহারের অযোগ্য বলি না কেন একশ্রেণীর মানুষ এ পানি দিয়ে জীবন ধারণ করছে। গোসল, খাওয়া হতে শুরু করে কাপড় ধোওয়া পর্যন্ত সকল আজ এ বুড়িগঙ্গার পানি দ্বারাই সম্পন্ন করছে। ফলে এ সব মানুষ যারা বুড়িগঙ্গার তীরে বাস করেন, সারা বছরই তারা নানা রকম রোগে ভুগে থাকে। খোঁচ পাচড়া, চামড়ার নানা রোগসহ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এদের বুড়িগঙ্গা ছাড়া কোন পথ নেই। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদীগুলো বাঁছানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমনিতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ শিকার। তার উপর পরিবেশ বিপর্যয় আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ঢেকে আনতে পারে। সে পরিবেশ রক্ষায় নদীগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকার ক্ষেত্রে এটা চিরন্তন সত্য। ঢাকার নদীগুলো বাঁচলে ঢাকা বাঁচবে। ঢাকাকে বাঁচাতে সরকারের এ পদক্ষেপ গুলো অত্যন্ত ফরপ্রসু হওয়া চাই। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণের দায়িত্ব ও কম নয়। তাই ঢাকাকে বাঁচাতে মৃতপ্রায় নদীগুলো বাঁচাতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। য়

ইতিহাসের ধারায় এবারের শিক্ষানীতি:সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

ইতিহাসের ধারায় এবারের শিক্ষানীতি:সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ (ৈদিনক েডসিটিন ০৯ িডেসম্বর ২০০৯ প্রকািশত)


মাহফুজুর রহমান মানিক
আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে শিক্ষানীতির ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীন বাংলার সূর্যাস্তের মধ্যদিয়ে যার সূচনা। ব্রিটিশরা এ সময়ে রাজত্ব পায়। শিক্ষানীতি/শিক্ষা কমিটি/শিক্ষা কমিশন কিংবা শিক্ষা ভাবনা অবশ্য আরো আগের। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদমকে (আ.) আল্লাহতায়ালা জ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, ফলে ফেরেস্তারা সেজদা করে আদমকে। বলা চলে শিক্ষার শুরুটা সেখানে। তবে জাতি হিসেবে, ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের ইতিহাসকে পনের শ’ শতক থেকে ধরি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল অতুল ঐশ্বর্যে ভরপুর। পঞ্চদশ শতকের শেষ ভাগে এখানে আসে পর্তুগিজরা। ধীরে ধীরে আসে ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজ এবং দিনেমাররা। শুরুতে তাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকলেও তারা শিক্ষা বিস্তারের কাজও শুরু করে। তাদের সঙ্গে আসে মিশনারি দল, যারা এ শিক্ষা বিস্তারের কাজ করে। ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত যতদিন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেনি ততদিন এ মিশনারিরাই তাদের শিক্ষা ও ধর্ম বিস্তারের কাজ করে। এরপর ১৭৯২ সালে চার্লস গ্রান্টের শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ, ১৮১৩ সালে কোম্পানির শিক্ষা সনদ, ১৮৫৩ সালে লর্ড মেকলে কমিটি, ১৮৫৪ সালের চার্লস উডের শিক্ষা বিষয়ক ডেসপ্যাচ, ১৮৮২ সালের হান্টার কমিশন, ১৯৩৪ সালের সাপ্রু কমিটি এবং ১৯৪৪ সালের সার্জেন্ট কমিটি-ইত্যাদি ছিল ব্রিটিশ আমলের শিক্ষার নীতি/কমিটি/কমিশন। ইংরেজদের এসব শিক্ষা চিন্তা কখনোই আমাদের কল্যাণে ছিল না। তাদের পদানত জাতি হিসেবে ব্যবহারই ছিল মূল লক্ষ্য। এগুলোর মাধ্যমে আমাদের চিন্তা, চেতনা ব্রিটিশদের মতো করাও ছিল অন্যতম লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে লর্ড মেকলের শিক্ষার তত্ত্বটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন- ডব সঁংঃ ধঃ ঢ়ৎবংবহঃ ফড় ড়ঁৎ নবংঃ ঃড় ভড়ৎস ধ পষধংং যিড় সধু নব রহঃবৎঢ়ৎবঃবৎং নবঃবিবহ ঁং ধহফ ঃযব সরষষরড়হং যিড়স বি মড়াবৎহ-ধ পষধংং ড়ভ ঢ়বৎংড়হং ওহফরধহ রহ নষড়ড়ফ ধহফ পড়ষড়ঁৎ নঁঃ ঊহমষরংয রহ ঃবংঃবং রহ ড়ঢ়রহরড়হং রহ সড়ৎধষং ধহফ রহঃবষষবপঃ.অর্থাৎ- এই মুহূর্তে এমন এক শ্রেণী সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে যে শ্রেণী আমাদের এবং লাখ লাখ শাসিতদের মধ্যে ব্যাখ্যাকারীর ভূমিকা পালন করবে। এ শ্রেণী এমন এক শ্রেণী হবে যারা রক্তে ও বর্ণে হবে ভারতীয়। কিন্তু রুচি, অভিমত, নীতিবোধ ও বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংরেজ। এ ছিল ইংরেজদের শিক্ষা চিন্তা।ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ এ ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের উদ্ভব। বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এ পাকিস্তান আমলেও শিক্ষা নিয়ে নানা কমিটি ও কমিশন হয়। ১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৫২ সালের মাওলানা আকরম খা কমিটি, ১৯৫৭ সালের আতাউর রহমান খানের এডুকেশন রিফর্ম কমিশন, ১৯৫৯ সালের নূর খান কমিশনের রিপোর্ট ইত্যাদি এর অন্যতম চিত্র। ইসলামী চেতনা নিয়ে গঠিত মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে এসব শিক্ষা চিন্তায় সাধারণ শিক্ষাসহ মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়টিও উঠে আসে। কিন্তু বছর বছর কমিশন আর কমিটির তোড়ে তেমন কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এ সময়ে ধর্মীয় বাধা, ভাষাগত বাধা এবং সুবিধাভোগীদের বাধার কারণে এসব রিপোর্ট বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সাবভৌম দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। যে চেতনা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে এ নবীন সূর্যের প্রকাশ, তার জন্য শিক্ষাও ছিল অপরিহার্য। ’৭১-এর স্বাধীনতার পরের বছরই ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৪ সালে কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পর ওই প্রতিবেদন বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৭৯ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শিক্ষা উপদেষ্টা কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে।১৯৮৩ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আব্দুল মজিদ খানের নেতৃত্বে শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থাপনা কমিশন গঠন করলেও ছাত্র বিক্ষোভের মুখে এ কমিশন বাতিল হয়। ১৯৮৬ সালে মফিজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মুখে এ কমিশনও বাতিল হয়।১৯৯৩ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার প্রাথমিক ও শিক্ষাবিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন করে। এর সভাপতি ছিলেন বিজ্ঞানী আব্দুল্লাহ আল- মুতী-শরফুদ্দিন। আওয়ামী লীগ সরকার এসে আবার ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শামছুল হকের নেতৃত্ব ৫৬ সদস্যের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। সে বছরের সেপ্টেম্বরে কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এটি বাস্তবায়নে সুপারিশ মূল্যায়ন ও অর্থায়নের জন্য ১৯৯৮ সালে ড. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়।২০০২ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমএ বারীর নেতৃত্বে শিক্ষা সংস্কার বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। চারদলীয় জোট সরকার ২০০২-এর ২১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৪ সালের মার্চে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়।এ ছিল আমাদের শিক্ষানীতির ইতিহাস। যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, সে সরকারই করেছে শিক্ষানীতি, শিক্ষা কমিশন। স্বাধীনতার ৩৮ বছরে গড়ে ৪টি করে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। সংখ্যাধিক্যের বিচারে রিপোর্টগুলো যতটা গর্বের, এর ইতিহাস কিন্তু ততটা সুখকর নয়। দেশের অর্থ, মেধাবীদের সময়ও শ্রম গেলেও আলোর মুখ দেখেনি একটি রিপোর্টও। রাজনৈতিক মতদ্বৈততা, সংকীর্ণ মন, সুদূরপ্রসারী চিন্তার অভাবেই রিপোর্টগুলো খসড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে।২০০৪ সালের মনিরুজ্জামান মিঞা শিক্ষা কমিশনের পর ২০০৬-এর চারদলীয় জোটের মেয়াদ শেষ হয়। ২০০৭-০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনপূর্ব ১৩ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। ইশতেহারের ১০ নং পয়েন্টে শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিরোনামে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ওয়াদা বর্ণিত হয়। বলা হয় ১০.১ মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান, ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে যুগোপযোগী নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হবে। ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষাঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত, শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন এবং স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন করা হবে। পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক সেবায় পরিণত করা হবে।১০.২ নারী শিক্ষা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি অব্যাহত রাখা হবে।১০.৩ শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাস, সেশনজটমুক্ত করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে। বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণাকর্মের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।নির্বাচনী এ ওয়াদা মতে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯ কমিটি গঠন করে। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে এবং ড. কাজী খলীকুজ্জমানকে কো-চেয়ারম্যান করে মোট ১৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে অন্যতম সদস্য অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ৮ এপ্রিল-২০০৯ কমিটি ঘোষণা হয়। ৩ মে কমিটির প্রথম বৈঠক বসে। ২ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ হয়। কাজ করে শিক্ষানীতি-২০০৯ এর চূড়ান্ত খসড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেয়। আরো পরে এসে খসড়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট িি.িসড়বফা.মড়া.নফ-তে দেয়া হয়। এখনও পিডিএফ ফরমে এ ওয়েব সাইটে আছে। ২৯টি অধ্যায় এবং সাতটি সংযোজনীর সমন্বয়ে করা হয় এ নীতি। খসড়া শিক্ষানীতি প্রকাশ করে এর ওপর পরামর্শ, মতামত জানানোরও সুযোগ দেয়া হয়। প্রথম ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত জানানোর সুযোগ ছিল, পরে অবশ্য অনেকের অবেদনের প্রেক্ষিতে ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত রাখা হয়। এখন ডিসেম্বর মাস। এ ডিসেম্বরেই এ নীতি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। জানুয়ারি-২০০৯ থেকে বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়ার কথা আছে। এবারের শিক্ষানীতি সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ যেমন বাস্তবায়নের আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও। ৮৮ ভাগ মুসলমানের দেশে এ নীতি কতটা জনসমর্থিত। কত ভাগ মানুষ সেক্যুলার শিক্ষানীতি চান সেটা দেখার বিষয়। শিক্ষানীতির সূচনাতেই এসে বিতর্কিত একটি বিষয়ের অবতারণা কখনোই বাস্তবসম্মত ছিল না। কারণ সেক্যুলার বললেও কিন্তু সেটা বাস্তবে ফলেনি। প্রাক-প্রাথমিকে যে মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডার কথা বলা হয়েছে সেটা এর সাংঘর্ষিক। আমার মনে হয় শিক্ষানীতির চূড়ান্ত কপিতে সেক্যুলার শব্দটি অযথা রাখার প্রয়োজন নেই। এবারের শিক্ষানীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা বললে প্রথমেই আসবে স্তরবিন্যাসের কথা। প্রাথমিক স্তর পঞ্চম শ্রেণী থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করা। আর মাধ্যমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী। এরপর উচ্চ শিক্ষা। মাঝখানের উচ্চ মাধ্যমিককে বাদ দিয়ে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণীর পূর্বে প্রাক প্রাথমিক স্তর বাড়ানো হয়েছে। এখন আমরা স্তরবিন্যাসে বলবো প্রাথমিক, মাধ্যমিক আর উচ্চ শিক্ষা। আরেকটু বলতে হবে প্রাথমিকের আগে রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার এ স্তরবিন্যাস বাস্তবে রূপ দেয়া সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জ, এর সঙ্গে আবার আছে শিক্ষকদের বেকারত্বের ঝুঁকি। সরকারের অর্থায়ন এখানে বড় ভূমিকা পালন করবে। এটা ঠিক বাস্তবতা বলে এ স্তরবিন্যাস যথার্থ, তবে সেটা বাস্তবায়নের জটিলতা কম নয়। কারণ বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোরই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক, আসবাবপত্রের দারুণ সংকট। এগুলো কাটিয়ে উঠে নতুন করে স্তরবিন্যাস, দুটি স্তরের সমন্বয়সাধন যেমন ব্যয়বহুল তেমনি সময়সাধ্য ব্যাপার। তারচেয়ে বড় কথা হলো যে উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত করা হবে সে উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে, বাস্তবতা হচ্ছে প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া অর্ধেক শিশুই পঞ্চম শ্রেণীর মধ্যে ঝরে পড়ে। এদেরকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে সরকারের যে কৌশল তা কতটা কার্যকর হবে।এবারের শিক্ষানীতি কমিটি গঠনের প্রাককালে এবং এর পরবর্তীতে একমুখী শিক্ষার অনেক তোড়জোর শুনেছি। আসলে একমুখী শিক্ষার ব্যাপারে গর্জন যতটা ছিল, বর্ষণটা সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষায় মাদ্রাসার কথা আসলেও আসেনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কথা। এখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়টি দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। মাদ্রাসা শিক্ষার যুগোপযোগী করার সঙ্গে এর স্বকীয়তা রক্ষায় আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় ১ম ও ২য় শ্রেণীতে আবশ্যিক হিসেবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত রাখা হয়েছে আর অতিরিক্ত হিসেবে আরবি রাখা হয়েছে, এখানে কুরআন রাখা অপরিহার্য। মাধ্যমিকে এসেও মাদ্রাসার কিছু বিষয় কমিয়ে ফেলা হয়েছে। স্কুলে ললিতকলা বিষয়টি দেয়ার ব্যাপারে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রাথমিকে আবশ্যিক হিসেবে আছে। অবশ্য মাধ্যমিকে সেভাবে নেই।উচ্চ শিক্ষায় আমাদের যে গবেষণার অভাব তার ওপর শিক্ষানীতিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হলো এ গবেষণার জন্য যা প্রয়োজন, যে বাজেট দরকার সরকার তার কতটা দিবে। ভোকেশনাল শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা তথা বাস্তবমুখী শিক্ষার বিষয়টিও শিক্ষানীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো আর শিক্ষক সংকট সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। মোদ্দাকথা হলো গোটা শিক্ষানীতিতে ভালো চিন্তার অভাব ছিলো না। কিন্তু এসব কিছুর বাস্তবায়ন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জই বটে। আমরা ২০১২ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ১০০ ভাগ ভর্তি করাতে পারবো কি না, ৪৭ ভাগ নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান বা সাক্ষর করতে আমাদের কতদিন প্রয়োজন সেটা মৌলিক প্রশ্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথাই বলি আর স্বপ্নের বাংলাদেশের কথাই বলি, আমরা বাংলাদেশকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য প্রথম প্রয়োজন শিক্ষা। আর শিক্ষার জন্য প্রয়োজন শিক্ষানীতি। এটা সত্য যে জাতি হিসেবে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নিয়ে আমরা ৩৮ বছর অতিক্রম করছি, অথচ আমাদের এ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষানীতি নেই। এ পর্যায়ে এসে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী দিনে বা আগামী কত দিনে দেশকে কোন পর্যায়ে নেব। চলমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট কেমন। প্রযুক্তির, জ্ঞানের, মেধার, প্রতিযোগিতার বর্তমান বাজার বিরূপ। আগামী ১০০ বছর পর এটা কোন পর্যায়ে পৌঁছবে। আমাদের বাধা কি কি। প্রাধান্যের ক্ষেত্র কোনগুলো ইত্যাদি ভেবে একটি সুচিন্তিত, সুদূরপ্রসারী শিক্ষানীতি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে এ শিক্ষানীতি ঠিক কতটা উপযোগী, এর বাস্তবায়ন কতটা সহজসাধ্য কিংবা কঠিন, কতদিনে বাস্তবায়ন হবে, বাস্তবায়ন হলে আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে না ইত্যাদি ভেবেই এটা চূড়ান্ত করা দরকার। শিক্ষানীতিতে বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা আছে বটে কিন্তু সেটা পারতপক্ষে আমাদের কতটা ফল দেবে তা দেখতে বাস্তবায়নে যত চ্যালেঞ্জই থাকুক তার মোকাবিলায় প্রথমে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। এ জন্য শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে জাতির মতামত ও পরামর্শগুলো গ্রহণ করা দরকার। আমরা ঐকমত্যে পৌঁছলে যে সরকারই আসুক সেটা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে শিক্ষানীতি বা কমিটি/কমিশনগুলোর অতীত ইতিহাস কখনোই সুখকর ছিল না। অতীতের দিকে না তাকিয়ে এবারের শিক্ষানীতি দ্রুত বাস্তবায়নে হাত দিতে হবে। অবশ্য সূচনাটা এবারের ভালোই- মাত্র তিন মাসে রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি, যদিও শেষ দু’সপ্তাহ অনেক কষ্ট করেছেন সদস্যরা। সরকারও ক্ষমতায় এসেই ৯ মাসের মধ্যেই জাতিকে খসড়া শিক্ষানীতি উপহার দিয়েছেন। প্রথম থেকে সরকারের এ নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ়কণ্ঠ রয়েছে। শিক্ষাখাতে সামনে বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত শিক্ষানীতি প্রকাশ করে। জানুয়ারি-২০১০ থেকে বাস্তবায়নের কাজ দিলে সরকার তার চ্যালেঞ্জে সফল হবে বলে মনে হয়।

জাতীয় শিক্ষানীতি (ৈদিনক েডসিটিন ২৪ মার্চ ২০১০)

জাতীয় শিক্ষানীতি
মাহফুজুর রহমান মানিক
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯ এর খসড়া প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। পরামর্শের আলোকে এ বছরের জানুয়ারিতেই শিক্ষানীতি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিলো। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে মার্চও শেষ হওয়ার পথে। এখনও শিক্ষানীতি চূড়ান্ত হয়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭৩ এর কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনসহ অনেক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে, কমিটি প্রতিবেদনও পেশ করেছে, কার্যত এ প্রতিবেদন বাস্তবে ফলেনি। এরপরও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে করলো ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯। এ শিক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তাটা কী। মৌলিকভাবে যদি শুধু শিক্ষানীতির প্রশ্নে আসি, কী প্রয়োজন একটি শিক্ষানীতির? আমাদের শিক্ষাতো জগাখিচুড়ি বলি আর যাই বলি এক রকম চলছেই। এর আর নীতির কী আছে?উত্তরটা শিক্ষানীতির নাম পড়লেই স্পষ্ট হয়। আমাদের শিক্ষানীতির নাম ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’। অর্থাৎ আমরা একটি জাতি, বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের নাগরিক। এ রাষ্ট্রটি তার স্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে, তার জাতির জন্য শিক্ষার একটি নীতি প্রণয়ন করছে। শিক্ষার এ নীতি রাষ্ট্র করছে তার জাতিকে টিকিয়ে রাখতে। ঠিক এ প্রশ্নে অর্থাৎ জাতীয় ও জাতীয়তার প্রশ্নে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ কতটা আন্তারিক বা আমাদেও রাষ্ট্র যে ধরনের জাতি গড়তে চাচ্ছে, সে জাতি গড়তে এ শিক্ষানীতির নির্দেশনা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, কর্মসূচি কী-সেটাই এখন দেখা যাক।স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষানীতির সূচনায় জাতীয়তার বিশ্লেষণ আসার কথা, কিন্তু সূচনাতে ভূমিকা শিরোনামে তিন পৃষ্ঠার বয়ানে চোখে পড়ার মত সে রকম কিছুই নেই। আছে কিছুটা রাজনৈতিক বয়ান, কমিটির কাজের বয়ান আর কিছু আপ্ত বাক্য (গণতান্ত্রিক উপযুক্ত মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৃথিবীতে যোগ্য হয়ে টিকে থাকা ইত্যাদি)ভূমিকার পর যে শিক্ষানীতি করা হলো তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকাই ছিল যথার্থ্য, বাস্তবে শিক্ষানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেও বর্ননা না দিয়ে অধ্যায় -১ শিরোনামে দেয়া হলো শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, ধরে নেয়া যাক এটিই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এখানে উদ্দেশ্য হিসেবে কতগুলো গুণের কথা বলা হয়েছে-মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, কুসংস্কারমুক্ত, পরমত সহিষ্ণু, দেশপ্রেমিক ইত্যাদি গুণ সমৃদ্ধ নাগরিক তৈরি।নীতি হিসেবে শিক্ষানীতিতে সেক্যুলার, গনমুখী, সুলভ, সুষম, সার্বজনীন, সুপরিকল্পিত এবং মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে মোট ২৮ টি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় অনুপ্রাণিত, জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারার প্রজন্ম ইত্যাদি। এগুলো ‘জাতীয়’ কথাটিকে প্রতিনিধিত্ব কওে বটে কিন্তু কোনটাই, পূর্ণাঙ্গ, সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত আসেনি। বর্ণনা এতো ঢিলেঢালা মনে হয় (আপাত দৃষ্টিতে) এগুলো না হলেও চলে। নীতির কথায় আসা যাক। অবশ্য এ নীতির কথা আগেই কিছুটা এসেছে। প্রথম বিষয়টা হলো জাতীয় শিক্ষানীতি হিসেবে জাতির নীতি বা জাতীয়তার নীতি আসেনি। গোটা শিক্ষানীতির ২৯ টি অধ্যায় আর সাতটি সংযোজনীর মধ্যে সবগুলো বিষয়ই নীতির প্রশ্নে যৌক্তিক হওয়া ছিলো বাস্তবতা। কিন্তু শিক্ষানীতিতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে যেসব বিষয় নীতির বাইরে স্রেফ কর্মসূচি হিসেবে আনা যায়। ভালোভাবে দেখলে মনে হবে এটি শিক্ষানীতি না হয়ে শিক্ষাকর্মসূচি হয়ে গেছে। জাতীয়তার প্রশ্নতো আগেই উধাও। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়তাকে যদি আমরা টিকিয়ে রাখতে চাই, বা জাতি হিসেবে একজাতি উপহার দিতে চাই এখানে শিক্ষার বিভিন্ন ধারা থাকবে কেন? কেনইবা আলাদে স্রোতে মাদ্রাসা আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থাকবে। আমাদের জাতিকে কোথায় দাঁড় করাতে চাই, রোডম্যাপ কী ইত্যাদি বিষয় না এসে শুধু একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৈরি এ মুখস্ত বুলিই আওড়ানো হয়েছে।স্বাধীনতা পরবর্তী কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন ছিলো জাতীয়তার প্রশ্নে কিছুটা আন্তরিক। এ কমিশন তার প্রতিবেদনের অধ্যায় এক এ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলী শিরোনামে যে আলোচনা করেছে, সেখানে তখনকার সংবিধানের মূলনীতির আলোকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি ভালোভাবে বলতে চেয়েছে। সাথে সাথে কেমন নাগরিক গড়তে চায় তার আলোচনাও সেখানে মোটামুটি স্পষ্ট। আর শিক্ষানীতির নীতির কথা বললে এর আগের মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন-২০০৩ প্রথমেই স্পষ্ট করেছে। ২০০৩ এর এ কমিশন রিপোর্টেও শুরুতেই এসেছে মৌলিক নীতিসমূহ শীর্ষক শিরোনাম। সেখানে নীতির প্রশ্নে শিক্ষার মূল লক্ষ্য কী হবে, শিক্ষার সুযোগ কারা পাবে, শিক্ষার গুণগত মান কেমন হবে, বিদ্যালয়ে ভর্তিও বয়স কত হবে, শিক্ষা কাঠামো কী হবে, উচ্চ শিক্ষা কেমন হবে, ভাষা নীতি কী হবে ইত্যাদি ৩০ টি মৌলিক নীতি এসেছে।এবারের শিক্ষানীতির মৌলিক সংস্কার বলা যায় স্তর বিন্যাস। বিদ্যমান শিক্ষাস্তর চারটি (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা) কে ভেঙ্গে এ শিক্ষানীতি তিনটি স্তরের সুপারিশ করেছে। নতুন স্তর বিন্যাস হলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা। এর সাথে প্রাথমিকের আগে যোগ করেছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে। আগের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। মাধ্যমিক শিক্ষা এখন নবম শ্রেণী হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর উচ্চশিক্ষা আগের মতই থাকছে।এ স্তরবিন্যাস শিক্ষানীতির বিরাট চ্যালেঞ্জ বটে তবে প্রাথমিক শিক্ষায়, এ শিক্ষানীতি রচনার আগে এবং রচনাকালে যে একমুখী শিক্ষার ব্যাপক তোড়জোড় শোনা গিয়েছিলো এবং শিক্ষানীতি কমিটির যে গর্জন ছিলো বিষয়ে অন্তত বর্ষণটা তেমন ছিলো না। সমন্বয়ের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার কথা আসলেও আসেনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কথা।মাধ্যমিক শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যšত্ম করে, বৃত্তিমূলক শিক্ষা করার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা অর্জন না করেও এ স্তরের পরই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে। তবে আগের মতই মাধ্যমিক স্তরের সূচনা থেকেই বিভাজন অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ভাগ করা হয়েছে। এরপর শিক্ষানীতি উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আগে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে আলোকপাত করেছে।তিন মাসের মধ্যে তাড়াহুড়ে করা শিক্ষানীতি সবকিছুর সন্নিবেশ ঘটালেও সবই পুরনো প্যচাল।তবুও আগেকার শিক্ষা নীতি/কমিশনগুলোর অবস্থান যে হিমাগারে সেখানে এটি যাবেনা, নীতি, জাতীয়তা, বিশ্বায়ন, ভবিষ্যতকে সামনে রেখে এটি চুড়ান্ত করে বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়া যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৮, ২০১০

বই নিয়ে এক প্রস্থ (PUBLISHED,3 February2010, Daily destiny)

রুটি মদ ফুরিয়ে যাবেপ্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবেকিন্তু একটি বই অনন্ত যৌবনাযদি তা তেমন বই হয়”বই নিয়ে ওমর খৈয়ামের এ কবিতার পর বলার আর কী থাকতে পারে। বই নিয়ে এমন সময়ে কলম ধরেছি, চারদিকে বই আর বই। বইয়ের আলোচনায় মূখর সবাই। কোনটা দিয়ে শুরু করা যায়। বইয়ের ইস্যুতো কম নয়। প্রতিষ্ঠানে বিনা মুল্যে বই বিতরণ, বইমেলা, কালোবাজারিতে বই, নিষিদ্ধ বই (গাইড) বিক্রি ইত্যদি। এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া যায় আমাদেও বই প্রীতি, বইয়ের গুরত্ব, লেখক, পাঠক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমী, লাইব্রেরী ইত্যাদি। প্রতিটি বিষয় ব্যাপক আলোচনার দাবী রাখে।২০১০ এর ফেব্রুয়ারি এখন। নতুন বছর শুরু না হতেই গনমাধ্যম সরব বইয়ের আলোচনায়। জানুয়ারি মাস জুড়েই ছিলো এ সরবতা। পত্রিকার পাতা ওল্টালেই বই। অবশ্য ফেব্রুয়ারিতেও বই নিয়ে শুরু হয়েছে লেখালেখি, গোটা মাস চলবে। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। বই নিয়ে জানুয়ারির যে সংবাদের কথা বলছি, সেটা ছিলো কোনোটা ইতিবাচক নেতিবাচক। প্রশ্ন জাগতে পারে বই নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ কেনো? কারণ বই মানেই ভালো কিছু। বইয়ের সংবাদের সাথে নেতিবাচক কথাটা খাটেনা। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত বছরে বইয়ের ধকল খেয়ে এবছরের(২০১০) জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেন। বছরের প্রথম দিন বা তার আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌছানোর অঙ্গীকার করেন। আগে শুধু প্রাথমিক ¯তরেই বিনামূল্যে বই দেয়া হতো, এবার প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক ¯তরেও বিনামূল্যে বই দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য ১৯ কোটি বই ছাপাতে মন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যান। তার চেষ্টা থাকা সত্তেও তিনি শতভাগ সফল হননি। সব শিক্ষার্থীও হাতে সময় মতো বই পৌঁছাতে পারেননি। বইয়ের নেতিবাচক সংবাদ হিসেবে প্রায় সব পত্রিকায়ই বিষয়টা উঠে এসেছে। এটা নেতিবাচক হলেও ইতিবাচক দিক হলো চেষ্টা আর সদিচ্ছার অভাব ছিলোনা। আর শতভাগ সফল না হলেও ৬৫ ভাগ সফল বলেও ধরা যায়। বাকী ৩৫ভাগ ব্যর্থতার জন্য বা¯তব কারণ ছিলো। অক্টোবরে এনসিটিবির গুদামে আগুন, অফিসারদের ঠিকমতো বই বিতরণ না করা ইত্যাদি। এরমধ্যে আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠান যারা বাজার থেকে বই কিনে থাকে, তারা বাজারে কেনার মতো বই অভিভাবকরা পাননি। ফলে পুরনো বই দিয়েই তাদের শ্রেণী কার্যক্রম চালাতে হয়। আবার এখনো প্রত্যšত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পুরো সেট বই পায়নি। অর্থাৎ বই না পাওয়ার নেতিবাচক সংবাদটি এখনো পাত্রিকার পাতায় লেগে আছে। আমাদের ব্যবসায় অত্যšত সিদ্ধহ¯ত! যেকোন ব্যবসাই হোক। বইয়ের ব্যবসায় এদের জুড়ি মেলা ভার। বই সিন্ডিকেট, বই কালোবাজারী, নিষিদ্ধ বই বিক্রি যার প্রকৃষ্ট প্রমান । সরকার প্রথম শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যšত নোট , গাইড নিষিদ্ধ করেছে। আদালতের রায়ও হয়েছে। এরপরও প্রকাশকরা নাছোড়বান্দা। তাদের ব্যবসায় লোকসান হয়ে যাবে, সুতরাং ছাপানো নোট গাইড বিক্রির অনুমতি দিতেই হবে। অনুমতি ছাড়াই এখন যে বেশিদামে এগুলো বিক্রি করছে তার কথা নাই বললাম। শিক্ষা বা শিক্ষবিজ্ঞান নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা অষ্টম শ্রেণী পর্যšত নোট গাইড নিষিদ্ধের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কিন্তু এ নোট বা গাইড বই আমাদের সমাজের এতটা গভীরে গ্রথিত হয়েছে, অনেক অভিভাবকরাও নিষিদ্ধের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা। গত বার থেকে আবার যুক্ত হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরীক্ষা। আগে শিক্ষার্থীরা গাইড পড়ে ভালো ফরাফল করেছে এবারও ভালো ফলাফলের জন্য চাই গাইড চাই নোট। অনেকে অভিভাবকই হতাশায় পড়েছেন। অভিভাবকদের এ হতাশা দূরীকরণ আর নোট গাইড নিষিদ্ধের মূল উদ্দেশ্য তখনি সাধিত হবে যখন শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে ভালোভাবে বই পড়াবেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন। ধরে ধরে প্রত্যেকটা বিষয় বুঝিয়ে দিবেন, প্রয়োজনে লিখে দিবেন। অন্যথায় নোট গাইড নির্ভরতা কমবেনা। অভিভাবকদের হতাশা কাটবেনা। প্রকাশনা সংস্থাগুলো চুরি করে হলেও এগুলো বিক্রি করবে। তখন পুরো পরিকল্পনাই ভে¯েত যাবে।বই নিয়ে এসব নেতিবাচক হতাশার কথা যখন বলছি, তখনি আশার আলো নিয়ে হাজির বইমেলা। গনমাধ্যমে সব খবর ছাপিয়ে প্রধান্য পেয়েছে বইমেলা। একুশের বইমেলা , ঐতিহ্যের বইমেলা, বাংলা একাডেমীর বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মানেই বই মেলার মাস। গোটা বছর ফেব্রয়ারির পথ পানে চেয়ে থাকি। বই প্রেমিক মানুষের মনের ক্ষুধা মেটাতে, নতুন লেখক পাঠক উপহার দিতে আসে ফেব্রুয়ারি। আসে বইমেলা।বাংলা একাডেমী চত্বরে লেখক পাঠকের মিলন মেলা। এ বই মেলার ইতিহাস আনেক আগের। বহু আগের বলা যাবেনা। বইমেলার সাথে অর্থাৎ বইমেলা শুরুর সাথে যে মানূষটির কথা সর্বাগ্রে চলে আসে তিনি চিত্তরঞ্জন সাহা। মুক্তধারা প্রকাশণীর কর্ণধার। শরুটা করেছেন চিত্তনঞ্জন বাবু নিজেই।১৯৭০ সালের২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলা একাডেমীর সামনের ফুটপাথে, একেবারে চট বিছিয়ে বইয়েরপসরা সাজিয়েছিলেন। সে এক কূঁড়িই আজ বিশাল বটবক্ষ।বইমেলার বিশ্বে বাংলাদেশের একুশের বইমেলাই একমাত্র যা মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য আšতর্জাতিক বই মেলার কথা বলা যেতে পারে। প্রথমেই উঠে আসবে ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা। জার্মানীর ফ্রাংকফুর্টে আনুষ্ঠিত হয় বলে এর নাম ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র পাঁচদিনের জন্য এ মেলা বসে। এ মেলার বয়স প্রায় পাঁচশ বছর। আয়োজক জার্মান পাবলিশার এন্ড বুক সেলার এসোসিয়েশন। এ মেলায় বিশ্বের নামিদামি লেখকদেও সমাবেশ ঘটে।অনেক দেশের প্রকাশকরা অংশ নেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরের বই প্রেমী মানুষ ছুটে যান এ বইমেলায়।করকাতার বইমেলাকে ঠিক একই কাতারে শামিল করা যেতে পারে। ১১/১২ দিনের বইমেলা। এ বছরের মেলা এখন কলকাতায় চলছে। অনুষ্ঠিত হয় প্রত্যেক বছরের জানুয়ারির শেষ বুধবার হতে ফেব্রুয়ারির প্রথম রবিবার। কলকাতার এবারের বইমেলার চমৎকারিত্ব একটু অন্যরকম। রবীন্দ্রনাথের দেড়শ তম জন্ম বর্ষে মেলা। আšতর্জতিকতার প্রকৃত রূপ দিতে প্রত্যেক বছর বিশ্বেও বিভিন্ন দেশ এর থিম কান্ট্রি থাকে। এবারের থিম কান্ট্রি মেক্সিকো। মেক্সিকো উদযাপন করছে তাদের স্বধীনতার শত বছর।এসব বইমেলার কথা শুনে হিংসে হলেও আমাদের বইমেলার স্বাতন্ত্র্য আমাদের কাছে। অনেকেই একে আšতর্জাতিক রূপ দেয়ার কথা বলেন। অনেকে আবার নিজস্ব প্রকাশকদের দ্বারাই বইমেলা হোক তা চান। এখানে আমাদের প্রকাশকদের স্থানের ই সংকুলান হয়না। আšতর্জাতিকতার ক্ষেত্রে যেটা বলা যায়, প্রত্যেক বছর ডিসেম্বরে আšতর্জাতিক বইমেলার নামে যে মেলাটা রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে হচ্ছে, এবার হলো সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, এ মেলার স্থায়ী ভেন্যূ নির্ধারন করে প্রকৃতই একে আšর্জাতিক বইমেলায় রূপ দেয়া যেতে পারে।একুশের বইমেলায় আসি। বইমেলার সাথে জুড়ে দেয়া একুশ শব্দটি আমাদের গৌরবের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য। সংগ্রামের এক দীপ্ত চেতনা। একুশ ১৯৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছে, পারেনি। তীব্র আন্দোলন আর শহীদের বিনিময়ে পেয়েছি বাংলা। বাংলার দামাল ছেলেরা সে যে জেগে উঠেছিলো ১৯৭১ এর স্বাধীনতার মাধ্যমেই তার সমাপ্তি হয়। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদর স্মরনেই বইমেলা। ১৯৫২ এর পর ১৯৫৫ তে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমী। বর্তমান বাংলা একাডেমী ভবনের আগের নাম ছিলো বর্ধমান হাউজ। বাংলা একাডেমীর মাঠজুড়ে তাই বইমেলা। এ মাঠে ও সংকুলান হয়না। চিত্তরঞ্জন বাবু এক থেকে এবারের স্টল সংখ্যা ৪৫০। মেলা নিয়ে অভিযোগ অনুযোগের শেষ নেই। ভালোবাসার জিনিসকে সবাই সুন্দরভাবেই পেতে চায়। বইমেলায় যদি বই স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা না যায়, স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটা না যায়। ধুলোবালিদেরই যদি মেলা হয়, অভিযোগ থাকাই স্বাভাবিক। সেটা না হয় মানা যায়। কিন্তু স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রের অনিয়ম কীভাবে মানা যায়। আমরা জানিনা এ অভিযোগ কতোটা সত্য। লটারি যদি করলে তা যথার্থই করা উচিত। মাঠের সুন্দও ব্যবস্থাপনাও আবশ্যক। বর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবে।ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান ঘোষিত হয়েছে। বইমেলাকেও ডিজিটালের রূপ দিতে কতগুলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্ববাসী বইমেলার আপডেট সংবাদ জানতে পারবে- িি.িবশঁংযবুনড়রসবষধ.রহভড়, িি.িবশঁংযবৎনড়র.পড়স, িি.িনড়রধিষধ.পড়স, ।আমাদের মুল বিষয় বই। মেলা হচ্ছে বইয়ের। বইকে আমরা কিভাবে দেখছি। অনেকেই আমাদের ব্যাপারে অভিযোগ করেন আমরা বই পড়িনা।সৈয়দ মুজতবা আলী যেটা তার বইকেনা প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, মহিলা তার স্বামীর জন্মদিনের উপহার কিনছে, দোকানি তাকে এটা ওটা দেখাচ্ছে, শেষে একট্ াবই দেখিয়ে বললো এটা নিতে পারেন। মহিলা কিছুটা বিব্রত হয়ে ’ সে ও তো ওর একখানি আছে” অর্থাৎ আমাদের কাছে একটা বই ই যথেষ্ট।আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যšত আমরা বই পড়ছি। সেটা ছাত্র জীবনে পরীক্ষায় পাশের জন্য পড়া। কর্মজীবনে বই পড়ার সময় কোথায়, পড়ার দরকারই বা-কী। যাদের সামর্থ্য আছে বই কিনিনা। অথচ অন্যান্য জাতি বই পড়ায় অভ্য¯ত। ভ্রমনে বের হলেও তাদের সঙ্গী বই। মার্কটোয়েনের কথাতো সবাই জানি, বই ঠাসা তার ঘর, মেঝেতে পা ফেলার আয়গা নেই। পড়ার জন্য বই ধার করে এনে ফেরত না দিয়ে গড়েছে লাইব্রেরী। কবি জসীম উদিদন যেটা বলেছেন, চুরি করে হলেও বই পড়। তিনি বইকে বলেছেন মনীষীদের চিঠি। বড় বড় লেখক, কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক আমাদের কাছে চিঠি লেখে গেছেন। সে চিঠি আমরা না পড়লে কারা পড়বে। বই পড়া অভ্যাসের বিষয়। এটা সু অভ্যাস। এঅভ্যাস থাকলে কখনো মানূষ নিঃসঙ্গ হয়না। একাকীত্বে পড়েনা। কারণ তার বন্ধু বই। যে তাকে ২৪ ঘন্টা সাহচর্য্য দিবে। বুড়ো সময়ের কথা চিন্তা করা যাক। যখন কেউ সঙ্গ দিবেনা। বই ই হবে একমাত্র সঙ্গী। কিন্তু যার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেনি, ছোট বেলায় বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব পাতা হয়নি, বুড়ো অবস্থায় ইচ্ছে করেও সে বইয়ে মনযোগ দেয়া সম্ভব নয়।একটা বইকে কতভাবে চিত্রিত করা যায়-বই একটা বিশ্ববিদ্যালয়, জ্ঞানের ভান্ডার, মনের খোরাক, বিনোদনের মাধ্যম, সময় কাটানোর শ্রেষ্ঠ উপায়, জীবন সমস্যার সমাধান, পরীক্ষায় পাশ,একটা চাকরি সর্বোপরি সুন্দর একটা জীবন। আমরা জ্ঞানী তাকেই বলি যে জানে। আর তাকে এ জানানটা দেয় বই। বই ছাড়া জ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়। ভালো রেজাল্ট করার জন্যও প্রয়োজন বই পড়া। লেখতে চাইলে শর্ত হলো বই পড়া। এক পৃষ্ঠা লিখতে হলে দশ পৃষ্ঠা পড়া দরকার। বই যারা লিখেন অনেক তপস্যা করে লিখেন। পৃথিবীর সামান্যই আমরা দেখছি, জানি। গোটা পৃথিবীতে আমাদের জানার ও দেখার বাইরে অনেক জিনিস রয়েছে। বই না পড়লে আমরা এসব জানবো না। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য আছে লেখকরা এসব কিছু খুজে বের করে আমাদের জন্য তৈরি করেন।প্রতিযোগিতার বিশ্বের কথা আমরা বলি। এ প্রতিযোগিতা জ্ঞানের। আজকের পৃথিবীর যে জাতি জ্ঞানে সমৃদ্ধ প্রতিযোগিতার দৌড়ে তারাই এগিয়ে। জাতি হিসেবে আমাদেও টিকে থাকতে হলে সে জ্ঞানের দৌড়ে আমাদেও ও অংশ নিতে হবে। পড়তে হবে বই।বই নিয়ে এ লেখাটা কবি জসীম উদ্দীনের ” আরো বই পড়–ন” প্রবন্ধের চুম্বক একটা অংশের মাধ্যমে শেষ করছি-” আপনারা বই কিনলে আর ও কি হবে জানেন? দেশের লেখকরা বই বিক্রি থেকে পয়সা পাবেন। দেশে একদল স্বাধীন-মত লেখক তৈরী হবে। তখন তারা যা ভাববেন তাই লিখতে পারবেন। দুর্বলের হয়ে, নিপীড়িতের হয়ে লড়াই করতে পারবেন। আপনাদের আশা আকাংখার আদর্শবাদের তারা রূপ দিতে পারবেন। দেশের অধিকাংশ লেখককে যদি জীবিকার জন্য সরকারের কোন চাকরী করতে হয়, তবে সেই সরকার কোন অবিচার করলেও লেখক দাঁড়াতে পারবেননা। লেখক স্বাবলম্বী হলে সে তা আপনারই লাভ। সরকারের সমালোচনা কওে তবে জেলে যেতে হবেনা। লেখকের বইগুলো সেই কাজ করবে। রুশো, ভলটেয়ারের লেখাগুলি তাদের দেশে মহা পরিবর্তন এনেছিলো।”এখন আমরা বই পড়বো কী পড়বোনা আমরাই বিচার করবে।

World economic recession & Bangladesh (30 April 2009, Financial Express)


World economic recession is going on since 2007. The main reason of this recession is the crisis of mortgaged loan of USA which has started in housing sector where sub prime were lending verily. The economists identified two prime reasons of this recession one is subprime lending & another is uncontrolled credit default. Its also true that, this world recession increasing also for environmental disaster e.g. conflagration of Australia & draught in California. Many people lost their jobs & back to their country as the starting of this recession is in America. About 6 lakhs & 51 thousands people lost their job in February 2008 & in January this number was 6 lakhs 55 thousands. To face this problem many companies cut their workers. Almost 1 crore people of the world lost their job in 2008. The effect of this recession is coming in small companies. On 26 January 2009 heavy machinery company CATARPILLAR, medicine company FIZER, telecom company SPRINT NEXTOR CORPORATION & infrastructure company HOME DIPO took decision to cut their workers. Bankrupt companies are increasing in number in USA. The export market of China fallen on because of Banking crisis and many people are losing work. In Japan, Spain, England, Russia, Germany, Mexico, Latin America and also Caribbean's countries contracted their job market. Bangladesh is not free from this recession. Its telling that 3 million people can loss their job of Bangladesh in this year, side by side poverty is increasing here. This recession affected on our export. According to export development bureau during last 7 months the exporting of raw jute decreased 15.20%, jute goods 19.80%, leather 31.80% & refrigerated foods 5%. BGMEA said their export decreased in January by 4.98% in February by 17.58% as our cloth mostly goes in USA & Europe so it greatly affects our industry. This recession greatly affected our manpower export as well. In the meantime Malaysia, Kuwait, Dubai, & Saudi Arabia returned back our workers. Malaysia cancelled the visa of 55 thousands workers. All the countries who are importing our manpower are going to cut our workers. Whenever this world recession affected in our manpower exporting it also affects our remittance. It is shown that the income from remittance decreased 250 crore in February than January 2009 from Middle East. This recession also greatly affected our industry where jute, sugar, spinning mills are about to die. Our textiles are also falling in danger. From the 80 mills of jute products 17 are fully stopped, 11 of these mills are working partially & other mills also are in the way to stop. Out of 25 lakhs workers, 1 lakhs labor has lost their job in spinning mills, 50 thousands labor are jobless. The unsold goods of spinning mills are tk 30 thousands crore. To protect this recession government, already took many steps. Our minister went to Malaysia to save visa of 55 thousands labor. Prime minister went to Saudi Arabia to solve the problem of Bangladeshi workers. Finance minister A M A Muhit declared a stimulus package. This package is of 3424 crore tk where 13% is for export, 43% for agriculture, 18% for power, 11% for food & 15% for agriculture loan. In this package there is no stimulus for RMG sector which is urgently needed. Though almost all economists welcomed this package but they said there is no definite guidance there. Its true that this package is not enough to check our problem but it is a stimulus package. It requires more steps. We think this package will be implemented perfectly & Bangladesh will be succeeded to free from this ongoing recession.

বেকার সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রকল্প (দৈনিক ডেসটিনি 18 march2010 PUBLISHED)

ঢাবির একজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি দিয়ে শুরু করা যাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রিডিং রুমে পড়তে পড়তে টেবিলে লিখেছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, একটা ভালো চাকরি যদি না পাই এর চেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় আর কী হতে পারে”। হয়তো সে তার মনের এ বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার করতে না পেরে টেবিলে লিখেছে। কিন্তু যে শিক্ষার্থী তীব্র প্রতিযোগিতার যুদ্ধে জয়ী হয়ে ভর্তি হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে, রিডিং রুমে এসে পড়াশোনা করছে, তার চাকরি না পাওয়ার এ আশংকা কেন? উত্তরটা অত্যন্ত স্পষ্ট- আমাদের দেশে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। চাকরি এখানে সোনার হরিণ। চাইলেই কেউ কাক্সিক্ষত চাকরি করতে পারে না। এখানেই অর্থনীতিবিদ পিগুর কথা- ‘যখন কর্মক্ষম জনগণ তাদের যোগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে চায় অথচ কাজ পায় না সে অবস্থাকেই বলা হয় বেকারত্ব।’বাংলাদেশে এ বেকারত্ব বা বেকার সমস্যা কতটা প্রকট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ষোল কোটি মানুষের দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা এখন তিন কোটি। এর মধ্যে ২০০৬-এর হিসাব অনুসারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২১ লাখ। ২০১০-এ এসে সংখ্যাটা যে বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রত্যেক বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বের হয়। এর বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তো রয়েছেই, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা নাইবা বললাম। স্পষ্টতঃই দেখা যাচ্ছে দিন দিন বেকারের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।স্বাভাবিকভাবেই বেকার সমস্যা দেশের এক বিরাট সমস্যা। এটি সকলের মাথা ব্যথার অন্যতম কারণও বটে। এ মাথা ব্যথা উপশমে সরকার বা প্রশাসন কোনো ভূমিকা নিক বা না নিক, এটা কিন্তু নির্বাচনের অন্যতম ইস্যু। নির্বাচনের আগে সব দলই দৃঢ় পদক্ষেপের বুলি ছোড়ে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ও নির্বাচনী ইশতিহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো বেকার সমস্যার সমাধান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ইশতিহারের ১৪ নং পয়েন্টে যুব সমাজ ও কর্মসংস্থান শিরোনামে সে কথাই বলা হয়েছে- ‘বছরে ন্যূনতম ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যেক পরিবারের একজন কর্মক্ষম তরুণ-তরুণীকে কর্মসংস্থানের জন্য এমপলয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম পর্যায়ক্রমে কার্যকরী করা হবে। সকল কর্মক্ষম নাগরিকের নিবন্ধন করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন প্রজন্মের সমুদয় যুব সমাজকে দুই বছরের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিস-এ নিযুক্ত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।”আওয়ামী লীগ তার এ নির্বাচনী ইশতিহারের অঙ্গীকার অনুযাযী পরোক্ষভাবে অনেক আগ থেকেই কাজ শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জেনেছি। প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানের উদ্যোগটা দেখা যায় এ মাসের ছয় তারিখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে চারজন বেকার তরুণ-তরুণীর হাতে মননয়নপত্র তুলে দিয়ে প্রতিশ্রুত ‘ন্যাশনাল সার্ভিসের’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এ সার্ভিস জেলার ৯ হাজার ৯৫০ জনকে এ প্রকল্পের আওতায় আনে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়- ‘কুড়িগ্রাম মঙ্গা হতে দিব না, আর মঙ্গা হবে না। সবার পেটে ভাত থাকবে, মানুষ শান্তিতে ঘুমাবে। কুড়িগ্রামের পর বরগুনা হবে দ্বিতীয় জেলা যেখানে অচিরেই এ কমিশন এর কাজ শুরু হবে। বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য এ প্রকল্প মূলত একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প। এখানে বেকারদের প্রশিক্ষণকালীন সময়ে দৈনিক ১০০ টাকা হারে দেয়া হবে। তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর পরবর্তীতে দুই বছর দৈনিক ২০০ টাকা হারে অর্থাৎ মাসে ছয় হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ৭ লাখ ২০ হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে এ প্রকল্প।বেকারত্ব নিরসনে উদ্ভাবিত সরকারি এ প্রকল্পের কথা জাতীয় বাজেটে এসেছিলো। বেকারত্ব নিরসনে এ প্রকল্প যে যথেষ্ঠ নয় তা বলা যায়। একদিকে যেমন এটি স্থায়ী চাকরি নয়, অন্যদিকে এর স্থায়ীত্বও বেশি নয় এর সাথে বেতনের পরিমাণটা তো আছেই। এটি পানির পিপাসায় ভীষণ তৃষ্ণার্তকে এক চামচ পানি দিয়ে তার পিপাসার জ্বালা বাড়ানো নয়, বরং সে অল্প পানি তার কিঞ্চিত পিপাসা মেটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হবে। অর্থাৎ আমাদের পাহাড়সম বেকারের কিছুটা পাথেয় হিসেবের এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। কম্পিউটার, চরিত্রগঠন, শারীরিক শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির প্রশিক্ষণ অস্থায়ী হলেও, এ সময়টা কম হলে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ একজন ব্যক্তিকে তার স্থায়ী বেকারত্ব ঘুচানোর কাজ করবে । প্রধানমন্ত্রী তো সে আশাবাদই ব্যক্ত করেছেন- ‘দুই বছর পর এসব বেকার যুবক ও যুব মহিলা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে এবং অপরকেও কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।প্রশিক্ষণের বিষয়ে বলার মতো বিষয় হলো প্রশিক্ষণগুলো হবে বাস্তব ভিত্তিক। এখানে অবশ্য কম্পিউটারের কথা এসেছে। বর্তমান প্রযুক্তির দুনিয়ায় কম্পিউটারে ইন্টারনেটসহ যে নানাবিধ বিষয় সেগুলো যেন নিশ্চিত হয়। এছাড়া এ প্রশিক্ষণগুলোর মাধ্যমে প্রার্থীরা যাতে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান করে নিতে পারে সে বিষয়টির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে।আওয়ামী লীগ প্রত্যেক পরিবারকে চাকরি দেয়ার যে অঙ্গীকার করেছে, সে বিষয়ে অনেকে সন্দেহ করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন প্রত্যেক পরিবার মানে কী দলীয় পরিবার? এ প্রশ্ন যে একেবারে ফেলনা তা কিন্তু নয়। গত বছরের শেষ দিকে সরকার চাকরির জন্য সারাদেশ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এর জন্য যদি কেউ বায়োডাটা দিয়ে থাকে তারা সবাই দলীয় লোক, কারণ বায়োডাটা সংগ্রহের এ ঘোষণা দলীয়ভাবেই হয়েছে, দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরকেই এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে যে চারজনকে মনোনয়ন দিয়ে ন্যাশনাল সার্ভিস শুরু করেছেন তাদের বিষয়েও রয়েছে দলীয়করণের অভিযোগ, এর সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগও উঠেছে।বিষয়গুলো যদি সত্য হয়, পুরো পরিকল্পনাকেই করবে প্রশ্নবিদ্ধ। এভাবে শেষ পর্যন্ত এটি সফলতার মুখ দেখবে কিনা এ বিষয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। সেজন্য সরকারকে অন্তত এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় এ প্রকল্পে অল্পদেরই স্থান দেয়া সম্ভব হবে। তার ওপর যদি উঠে দলীয়করণ আর দূর্নীতির অভিযোগ সেটা জনগণ মেনে নেয়ার কথা নয়। এ অবস্থাভাবাপন্নের দিক থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই পুরো প্রকল্প পরিচালনা করা উচিত।সরকার বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য এ প্রকল্পের পাশাপাশি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিতভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারে। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও অনেক জনবলের প্রচ- সংকট রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ১৪ তারিখ প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম উল্লেখ করা যেতে পারে- ‘লোকবল সংকটে ৩৮৭ রেলস্টেশনের ১০৬টিই বন্ধ। এভাবে ডাকবিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষাসহ সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে জনবল নিয়োগ দেয়ার অনেক পদই খালি আছে। ইতিমধ্যে ৩০তম বিসিএস-এর সার্কুলারও হয়ে গেছে। নিয়মিতভাবে নিয়োগের বিষয়টি অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালোভাবে চলবে।বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতিহার এবং বিভিন্ন বক্তব্যে বেকারত্বের হার ২০২১ সাল নাগাদ বর্তমান ৪০ ভাগ থেকে ১৫ ভাগে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। সরকারের এ সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই নিয়োগের এসব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে যেমন নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, পাশাপাশি বিদেশেও যাতে অধিক হারে জনশক্তি রফতানি করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এখনও বিভিন্ন দেশে আমাদের জনশক্তি কাজ করছে। এখনও বিদেশে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করছে। এখন বিভিন্ন দেশে যারা কাজ করছে অধিকাংশই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়, ফলে এরা নিম্নমানের কাজ করছে, অল্পই বেতন পাচ্ছে। সরকারি এ প্রকল্প যদি শ্রমিকদেরকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেয়, বিদেশে গিয়েও তারা ভালো কাজ পাবে, ভালো বেতন পাবে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যারোর তথ্য মতে, এপ্রিল ২০০৯ পর্যন্ত বিদেশে কর্মরত জনশক্তির সংখ্যা ৫৫ লাখেরও অধিক। যেসব দেশে আমাদের জনশক্তি আছে সরকারিভাবে সেসব দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া দেশের আইন-শৃংখলাসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রেখে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা দরকার। বেশি বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে এগুলো নিশ্চিত করা যায়।সরকারি চাকরিদানের প্রকল্প ন্যাশনাল সার্ভিসকে কার্যকরী করতে এর সচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দলীয়করণ মুক্তি আবশ্যক। চাকরির বাজারভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং প্রশিক্ষণের পর নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী চাকরির বন্দোবস্তই প্রকল্পের সুফল বয়ে আনবে। বেকারত্ব দূরীকরণে সমাজের সবাইকে সরকারের পাশাপাশি কাজ করলে অমরা বেকারত্বের অভিশাপ হতে কিছুটা হলেও রেহাই পাবো।

বুধবার, মার্চ ১৭, ২০১০

প্রথম দিনেই নতুন বই (janakntha 28 january 2010)

নতুন বছরে নতুন কাসের সাথে সাথে নতুন বই শিার্থীদের প্রত্যাশা। শিশুদের েেত্র এ প্রত্যাশা চিরন্তন সত্য। পৃথিবীটা তাদের কাছে নতুন। নতুন পৃথিবীতে সবকিছুতে নতুনই ভালবাসে শিশু। শিশুদের পড়ার জন্য চাই নতুন বই। এজন্যই আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই সরকার বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ করছে। প্রাথমিক স্তরে বিতরণ করা এ বইয়ের আগের চিত্র মোটেই সুখকর নয়। সবাই প্রথম দিনই শিার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি করলেও বাস্তবে ফলেনি। বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় শিার্থীরা শিাবর্ষের প্রথম দিন দূরে থাক, গোটা জানুয়ারি এমনকি ফেব্রুয়ারিতেও বই পায়নি। ফলে শিার্থীদের অর্ধেক পুরনো বই এবং অর্ধেক নতুন বই দিয়ে কাস করতে হতো। শিার্থীদের সম্পূর্ণ নতুন বই দিয়ে প্রথম দিন থেকে কাস করার স্বপ্ন কখনই বাস্তবে ধরা দেয়নি। এবারের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। দিন বদলের সরকার মতায়। এ সরকার শিাকে তাদের অন্যতম প্রাধান্য দিয়ে শিা সংক্রান্ত নানা কর্মসূচী নিয়েছে। শিানীতি যার অন্যতম। গত বছরের সূচনাতে মতা গ্রহণ করেই বই নিয়ে সরকার এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। একেতো নতুন সরকার, তার ওপর এ বইয়ের বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি কাজ ছিল। ফলে এখন নানা সমস্যায় শিার্থীরা যথাসময়ে বই পায়নি। বইয়ের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ল্যে সরকার অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে "পাঠ্যবই সঙ্কট উত্তরণে" জাতীয় পরামর্শ কমিটি গঠন করে। কমিটির পরামর্শক্রমে বইয়ের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করতে নানা ব্যবস্থা নেয় সরকার। তার অংশ হিসেবে এবারই প্রথম প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিকেও বই বিনামূল্যে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা চলে শিামন্ত্রী একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বইয়ের কাজে হাত দেন। শুরু থেকেই ভালভাবে কাজ করেন। ল্য ছিল ডিসেম্বরের মধ্যেই অর্থাৎ নতুন শিাবর্ষের পূর্বেই শিার্থীদের হাতে বই পেঁৗছানো। সে ল্যে পুরোদমে কাজ চললেও মাঝ পথে এ কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৮ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় শিা কার্যক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গুদামে ভয়াবহ অগি্নকাণ্ড ঘটে। তবুও সরকারের এ প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয় না। শিামন্ত্রী অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে তখন বলেছেন, যে করেই হোক আমরা সঠিক সময়ে শিার্থীদের হাতে বই পেঁৗছাবই। মোট ৯২০টি প্রেসে করা এ কাজ সম্পন্ন না হলে বিদেশ থেকেই বই আমদানি করে হলেও বই দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট ১৯ কোটি বই অত্যন্ত দুরূহ হলেও সরকার তার কাজে সফল হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। এর মধ্যে আবার নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম বাঁধাই শ্রমিক সঙ্কট সৃষ্টি করে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনেক বই ব্যবসায়ী পুরনো বইয়ে নতুন মলাট দিয়ে ঢাকার বইয়ের বাজারে বই বিক্রির চেষ্টা করে। শিামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে অভিভাবকদের সে বই না কিনে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানান। সকল বাধা মাড়িয়ে শিামন্ত্রী নিজে শিার্থীদের হাতে বই বিতরণের মাধ্যমে তাঁর সফলতার দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছান। দেশের প্রায় সকল স্থানেই বই পেঁৗছে গেছে। শিার্থীরাও পেয়েছে। সরকারের ইচ্ছা, চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও হয়তো কিছু শিার্থী এখনও বই পায়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মাধ্যমিক, এবতেদায়ী স্তরে ৯০ শতাংশের মতো বই বিতরণ করা হলেও কিছুটা পিছিয়ে আছে প্রাথমিক ও দাখিলের কাজ। রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুলগুলোতে প্রাথমিকের বই পেঁৗছেছে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ। বাকি কাজের জন্য সরকারের গোটা কার্যক্রম যে অসফল তা কখনও বলা যাবে না। বইয়ের েেত্র এ মাঝখানের বিরাট বাধা সত্ত্বেও এত বেশি সংখ্যক শিার্থীর বই পাওয়া ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এসব বাধা না থাকলে সরকার যে ১০০ ভাগ সফল হতো তা নিশ্চিত করে বলা যায়। গত ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এ বইগুলোকে ইন্টারনেটে এনসিটিবির ওয়েব সাইট (ষষষ.ভর্ডঠ.থমশ.ঠঢ)-এ দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি ভাল উদ্যোগ। এখান থেকে গোটা বিশ্বের যে কেউ দেখতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় ডাউনলোড করতে পারবে। পাঠ্য পুস্তকের েেত্র ডিজিটালের একটি অন্যতম চমক এটি। এর সাথে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ ইন্টারনেট প্রদান করে ডিজিটালের েেত্র আরও এক ধাপ অগ্রসর হওয়া যায়। যাতে ফলাফলসহ প্রশাসনিক সকল কাজকর্ম ইন্টারনেটেই সম্পন্ন করা যায়।

বুড়িগঙ্গা বাঁচুক (16 january 2010)



মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করছেন পরিবেশবাদীরা। শুধু দাবি-দাওয়া পেশ আর মানববন্ধনই নয়, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এটি। অবশেষে টনক নড়ে সরকারের। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশে অবস্থিত অন্যান্য নদী তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার প্রাথমিক অবস্থায় নদীকে দখলমুক্ত করতে চেষ্টা করে। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৬ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গার তলদেশ থেকে বর্জ্য ও পলিথিন অপসারণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর বাদামতলীর দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকার বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে।
আদালতের নির্দেশে সরকার নদীর তীরের অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল। সে কার্যক্রম কতটা সফল হয়েছে বলা যায় না। সেখানে অবৈধ দখলদারিত্ব তো উচ্ছেদ হয়নিই; বরং নির্মিত হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট, গুদামসহ অনেক কিছু। এখনও বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর তীর ঘিরে রয়েছে নানা স্থাপনা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানা, দোকান, বসতবাড়ি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসাও। বুড়িগঙ্গার সীমানায় অনেকেই নিজের জমি দাবি করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।
বর্জ্য উত্তোলনে পদক্ষেপের মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধান হবে কি? একে তো এ বর্জ্য উত্তোলনের ভালো ড্রেজার আমাদের নেই, তার ওপর আবার উত্তোলিত বর্জ্য কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে রয়েছে টানাহেঁচড়া। যেসব কারণে বুড়িগঙ্গার পানির এ দৈন্যদশা, সেগুলো চিহ্নিত করে তার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ কার্যক্রম কোনো কাজ দেবে না।
বুড়িগঙ্গা এতদিনে পরিণত হয়েছে বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে। এটি ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকার প্রধান সুয়ারেজ বর্জ্যের আউটলেট হিসেবে। শিল্পকারখানার বর্জ্য, মেডিকেলের বর্জ্য, ট্যানারির বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, হাটবাজারের পরিত্যক্ত সামগ্রী ইত্যাদি ফেলার স্থান হিসেবে বুড়িগঙ্গা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে নাব্য হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা, পানি হয়েছে দূষিত। এগুলো শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে কয়েক স্তর তৈরি করেছে নদীর তলদেশে। এ অবস্থায় বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ সময়ের দাবি। এ বর্জ্য উত্তোলন আর নদীখননের কাজ ফলপ্রসূ করতে, স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার আসল চেহারা ফিরিয়ে দিতে কিছু কাজ করা জরুরি। প্রথম কাজটি হবে নদীদখল মুক্তকরণ। শুধু বুড়িগঙ্গার নয়, ঢাকার চারপাশের অন্যান্য নদীর সীমানা নির্ধারণ করে তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকরণ। বর্জ্য উত্তোলনে, সফলতার জন্য যেসব শিল্পকারখানার কারণে নদী দূষিত হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেককে বর্জ্য ফেলার জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট তথা ইটিপি স্থাপনের জন্য বাধ্য করতে হবে। আজকের বুড়িগঙ্গা হাজারীবাগের যে চামড়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এ শিল্পকে দ্রুত সাভারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, মহানগরীর মানুষের জন্য বিকল্প পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এসব বিষয়ের বন্দোবস্ত না করে শুধু বর্জ্য উত্তোলন করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
শুধু ঢাকা শহরের নদীই নয়, গোটা দেশের নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দেশে মোট নদীর সংখ্যা ২১০টি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নদী ৫৪টি। একদিকে দেশের নদীগুলো আমাদের দ্বারাই দখল আর দূষণে যায় যায় অবস্থা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগগুলোর পানিচুক্তি নিয়ে নিয়মিত দরকষাকষি করতে হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে।
আজ সীমাহীন সংকটে মেগাসিটি ঢাকা। যানজট, জনসংখ্যা আর গাড়ির চাপে ঢাকা একদিকে যেমন ন্যুব্জ আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সংকটে সংকটাপন্ন। নদীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। একশ্রেণীর মানুষের অত্যাচারে নদীগুলোর প্রাণ যায় যায়।
বুড়িগঙ্গার পানিকে আমরা যতই কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধময় কিংবা ব্যবহারের অযোগ্য বলি না কেন, একশ্রেণীর মানুষ এ পানি দিয়ে জীবনধারণ করছে। গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়াসহ সব কাজ তারা করছে। সারা বছরই তারা নানা রোগে ভুগে থাকে। তাদের বুড়িগঙ্গা ছাড়া কোনো পথ নেই। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদী বাঁচানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গা সত্যি কি বুড়ি হয়ে মরে যাবে?

রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেমন চলছে(যুগান্তর ৩ ডিসেম্বর ২০০৯)

দেশে বর্তমানে ১১ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে অবশ্য ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যার দিক থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই প্রথম। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮২ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৈন্যদশা সম্পর্কে আমরা জানি। শ্রেণী কক্ষ সমস্যা, স্থান সমস্যা, শিক্ষক সমস্যা, উপকরণ সমস্যা ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা ভালো হবে বলেই আমাদের ধারণা ছিল। কিছুদিন আগে (১৪.১১.০৯) একাডেমিক এসাইনমেন্টের কাজে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আমরা কয়েকজন বন্ধু যাই। শিক্ষক সাক্ষাৎকার আর শ্রেণীকক্ষ পর্যবেক্ষণ ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। শিক্ষক সাক্ষাৎকার নেব, কিন্তু সাক্ষাৎকার দেয়ার মতো তাদের সময় কোথায়। একটার পর একটা ক্লাস নিতে তারা ব্যস্ত। শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করি, সপ্তাহে কয়টি ক্লাস নেন? উত্তর ছিল, ‘সপ্তাহে কেন, জিজ্ঞেস করুন দিনে কয়টি ক্লাস নেই। দিনে আমাদের নির্দিষ্ট পাঁচটি ক্লাস তো নিতে হয়ই, অনেক সময় অতিরিক্ত আরও ২-১টিও নিতে হয়। সপ্তাহে গড়ে ৩৫টি ক্লাস তো নিতে হয়ই।’
প্রধান শিক্ষকরা আরও বেশি ব্যস্ত। নাজিরাবাজার ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে যে প্রধান শিক্ষক আছেন, তিনি মোট তিনটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অর্থাৎ একসঙ্গে তাকে তিনটি বিদ্যালয় দেখাশোনা করতে হয়। রাজধানীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাঠের কথা না বললেও শ্রেণীকক্ষের বিষয়টি আসবেই। একদিকে ঢাকার প্রাইভেট স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা আলিশান ভবনে ক্লাস করছে, অন্যদিকে একই শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে জীর্ণশীর্ণ দালানে। শ্রেণীর সাইজও দেখার মতো, গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। আর সেখানকার শিক্ষার্থীদের অবস্থা (সামাজিক মান) জিজ্ঞেস করতেই এক শিক্ষক করুণ কণ্ঠে জানালেন, ‘ভাই এখানে যারা পড়ে তাদের সামাজিক মান বলতে কিছু নেই। তাদের নিু-মধ্যবিত্ত বললে ভুল হবে কিনা জানি না, তবে আমি কয়েকজনের বাসায় গিয়েছি, ছোট্ট খুপড়ির মধ্যে কোনরকমে থাকে। পড়ার জায়গা তো নেই-ই, স্কুলটাই তাদের একমাত্র স্থান। সকাল ৭টায় স্কুলে আসতে হলে তো অধিকাংশ শিক্ষার্থীই খেয়ে আসতে পারবে না।’
এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনও রাজধানীতে বাস করার উপযোগী নয়। এ কারণেই শিক্ষক স্বল্পতা। শিক্ষকরা ভালো পাস করে এখানে এসে কয়েক মাস চাকরি করেই ভালো কোথাও চলে যান। বেতনকাঠামো আর বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি না থাকায় সবাই নতুন চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে শিক্ষক স্বল্পতা এখানে লেগেই আছে। তবে ভালো বিষয়টি হল, এখানকার শিক্ষকরা মোটামুটি সবাই অনার্সধারী, অনেকেই আছেন মাস্টার্স, অধিকাংশই বিএড করা। সিএনএড তো সবার আছেই। তবে ন্যায্য সম্মানী না পাওয়ায় তারা ভালো কিছু দেয়ার প্রেরণা হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
http://jugantor.info/enews/issue/2009/12/03/news0652.php

ডেলাইট সেভিং টাইম আমাদের ডিজিটাল দুর্ভোগ ( দৈনিক ডেসটিনি ২ ডিসেম্বর ২০০৯)

১৯ জুন-২০০৯। সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিট। সেল ফোনটি বেজে উঠে। কল নয়, মেসেজ এসেছে। একসঙ্গে কয়েকটি মেসেজ। শব্দের ভিন্নতা থাকলেও সব মেসেজের মূল ভাব অভিন্নÑ ‘চোখ রাখুন টিভির পর্দায়, একটু পরেই দেখবেন প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দেশের ১২টা বাজান।’ না, প্রধানমন্ত্রী দেশের ১২টা বাজাননি, ঘড়ির কাঁটার ১২টা বাজিয়েছেন। অর্থাৎ রাত ১১টার কাঁটাকে করেছেন ১২টা। এক ঘণ্টা এগিয়ে দিয়েছেন সময়। সে ১৯ জুন থেকে আজও আমাদের ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে। এ সময়টাকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বলে ‘ডে লাইট সেভিং টাইম’। বিশ্বব্যাপী এ ‘ডে লাইট সেভিং টাইম’ সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি রীতি। ২০০৯-এ এসে বাংলাদেশ এ রীতির অনুসরণ করছে। সূচনাটা অবশ্য অনেক আগের। এর ধারণা প্রথম দেন আমেরিকার বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন। ১৭৮৪ সালে তিনি ধারণা দেন। প্রথম ডে লাইট সেভিং টাইম আমেরিকার রেল রোডে প্রয়োগ করা হয়। অবশ্য তখন ঠিক এ নামে ছিল না। ১৯০৭ সালে এসে ব্রিটেনের একজন স্থপতি বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করেন। এ ব্যাপারে তিনি অহ বপড়হড়সরপধষ ঢ়ৎড়লবপঃ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। উইলিয়াম ওয়ালেট নামের এ স্থপতি তার প্রবন্ধে দিনের আলোকে ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। ফলে এটি ডে লাইট সেভিং টাইম হিসেবে পরিচিত। প্রথম দিকে আমেরিকা আর ব্রিটেন এ সময়ের অনুসরণ করে। এর পরই বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের অনুসরণে এ রীতি চালু করে। ১৯১৬ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে এ রীতি অনুসরণ করে। বর্তমানে ২০০৯ প্রায় ৭৫টি দেশে এটি চালু আছে। বাংলাদেশ যার অন্যতম। ডে লাইট সেভিং টাইম চালু করার পেছনে প্রধান কারণটি দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সময়ভিত্তিক ওয়েবসাইট িি.িঃরসবধহফ ফবঃব.পড়স কয়েকটি কারণ বের করেছে, সেগুলো হলো প্রথমতÑ মানুষ এ রীতি পছন্দ করে, দ্বিতীয়ত এনার্জি সেভিং, তৃতীয়ত ট্রাফিক দুর্ঘটনা কমানো, অপরাধ কমানো, ভোটারদের আকৃষ্টকরণ- ইত্যাদি। বাংলাদেশ অবশ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ সময়ের প্রচলন করে। খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা যায় সরকার এ রীতির অনুসরণে ঘড়ির কাঁটাকে এক ঘণ্টা এগিয়ে এনেছে।
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনতে সরকার দেশের জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তেমন কোনো আলোচনা করেনি। মিডিয়ায় সরকারের এ পরিকল্পনার সংবাদ পেয়েই অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সবারই যুক্তি ছিল। অবশ্য আমাদের জন্য দেখার বিষয়ও ছিল যে সরকার আসলেই কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। বিষয়টি তখন বলা চলে সবাই মেনে নিয়েছে কারণ তখন সূর্য উঠত সোয়া পাঁচটায়, আর এক ঘণ্টা এগিয়ে আনার পর হলো সোয়া ছয়টা। ঘুম থেকে উঠে সূর্যকে মাথায় নিয়ে তখন অনেক কাজ করাই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা এখন। সমস্যা এখনও হতো না, যদি সরকার তার ওয়াদামতো কাজ করত। সরকার জুনে ডে লাইট সেভিং টাইম চালু করেছে, বলেছে সেপ্টেম্বরে কিংবা অক্টোবরে এসে আগের সময়ে ফিরে যাবে। সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর তো শেষ হলোই তারপর নভেম্বর পেরিয়ে এখন ডিসেম্বর। অবশ্য অক্টোবরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তোফিক-ই-ইলাহী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঘড়ির কাঁটাকে আর পেছানো হচ্ছে না। অবাক হয়েছি আমরা। একদিকে ডে লাইট সেভিং টাইম-এর অনুসরণ করা হয়। এ জন্য একে সামার টাইমও বলে, অর্থাৎ সাধারণত গ্রীষ্মে বিশ্ববাসী এ সময়ের অনুসরণ করেন। প্রায় সব দেশেই যারা এর অনুসরণ করেন তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়া আছে। যেমন আমেরিকায় এর রুটিন হলো এপ্রিল মাসের প্রথম রোববার থেকে অক্টোবরের শেষ রোববার। মিশরে এপ্রিলের শেষ শুক্রবার থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার। এভাবে প্রত্যেক দেশের আছে। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। যদিও এখনও সময় সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলোতে অন্যান্য দেশের যেমন নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় দেয়া আছে সেখানে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে কারো মতে বাংলাদেশ মূল সময়ে ফিরে যাবে সেপ্টেম্বরে আবার কেউ বলে অক্টোবরে।
আমার কথা কিন্তু সেখানে নয়। বাংলাদেশ ডে লাইট সেভিং টাইম-এর বিশ্বের অন্যান্য উদাহরণ মানলো কি মানলো না, এর ইতিহাস ভঙ্গ করলো কি করলো না সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হলো এ সময়-রীতি আমাদের দেশের জন্য, জনগণের জন্য কতটা কল্যাণের সেটি। বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে এ সময় কল্যাণকর তো নয়ই বরং ক্ষতিকর বললেও কম হয়ে যায়। সরকার বিষয়টি কতটা লক্ষ্য করেছে জানি না, সরকারের এ সময়-রীতি বলা চলে শুধু শহরেই অনুসৃত হচ্ছে। সেটা এক প্রকার বাধ্য হয়েই। অথচ এর বাইরে গ্রামের যে বিশাল অংশ, অধিকাংশ মানুষ যে গ্রামে বাস করে সেখানে কেউই এ সময়ের অনুসরণ করে না। গ্রামের মানুষের কাছে আগের সময়ই সময়। নতুন সময়কে তারা চমৎকার একটি নাম দিয়েছে ‘ডিজিটাল টাইম’। যদিও জনগণের দেয়া এ ডিজিটাল টাইমই এখন সর্বত্র প্রসারিত। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন, ফলে সরকারের প্রণীত নতুন সময়ও ডিজিটাল নামেই সবাই জানে। আজকে এ ডিজিটাল টাইম শহরের ক্ষুদ্রাংশ অনুসরণ করেন তাদের কিন্তু দুর্ভোগের শেষ নেই। দুর্ভোগ যে শুধু তাদের তাও নয়। সরকারি সময় বলে গ্রামের জনগণ এ সময়েরও খোঁজ-খবর রাখত। গ্রামে ঈদের জামাতের মাইকিংয়েও বলা হয় ঈদের জামাত সকাল সাড়ে আটটায়, ডিজিটাল সাড়ে নয়টায়। তাদের একসঙ্গে দুটো সময়ই বলতে হয়। তাদের অনুসরণ করা সময়মতো রেডিও টিভি কিংবা অন্য কোনো চ্যানেলের সংবাদ পরিবেশন হয় না। গ্রাম থেকে কেউ শহরে আসলে কিংবা শহর থেকে কেউ গ্রামে আসলে হোঁচট খেতে হয়। এগুলো অবশ্য ছোট সমস্যা। বড় সমস্যায় আসছি। তার আগে বলছি সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ কিন্তু এ নতুন সময়কে সেভাবে মেনে নিতে পারেনি। জনমত আর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়কে সরকারকে অবশ্যই দেখতে হবে। আমরা যারা শহরে বাস করছি ডে লাইট সেভিং টাইমে প্রধান সমস্যা তাদেরই। এ সমস্যা প্রধানত যাদের বেশি পোহাতে হচ্ছে বা হবে তারা হলো নারী ও শিশু। যাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র বা সরকার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নেবে। এ সময় সে সরকার দ্বারাই তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এখন সূর্য উঠে ভোর সাড়ে সাতটায় কিংবা আটটায়, একটি শিশু কখন ঘুম থেকে উঠবে, নাস্তা করবে। কখন স্কুলে যাবে। এখন অবশ্য সাধারণ বিদ্যালয়গুলো বন্ধ কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল খোলা। আবার জানুয়ারিতে যখন সকল প্রতিষ্ঠান খুলবে তখন সূর্য উঠবে পোনে আটটায়। তখন একই সমস্যায় পড়বে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শিশুটির মা কিংবা বাবা অনেক কষ্টে তাকে ঘুম থেকে উঠাচ্ছে। শিশুটি ঘুমে। নাস্তা করার সময় কোথায়? ঘুমের মধ্যে রেখে কোলে নিয়ে স্কুলে পৌঁছতে হয়। এটি শিশুদের জন্য কতটা খারাপ, কিংবা তাদের প্রতি কতটা অবিচার করা হচ্ছে তা একটি শিশুর ঘটনাই প্রমাণ করে। স্ট্যান্ডার্ড ফোর-এ পড়–য়া (ইংলিশ মিডিয়াম) ছাত্র ইশাত-এর কথা বলা যায়। একদিন ইশাতের পড়াকালীন সময়ে সামনে একটা শব্দ আসলো ঞুৎধহঃ, বললাম এর অর্থ পৎঁবষ ৎঁষবৎ (নির্দয় শাসক)। ইশাত বললো ঝরৎ, বি ধৎব ঁহফবৎ ংধসব ৎঁষবৎ (্আমরাও তেমন শাসকের অধীনে বাস করছি)। বললাম কেন? উত্তরটি ছিল, স্যার স্কুলের ক্লাস শুরু হয় সকল ৮টায়। ঘুম থেকে উঠতে হয় ছয়টায়। এত আগে কি ঘুম থেকে উঠা যায়। আবার সারাদিনও ঘুমের সুযোগ নেই। সরকার কি ঘড়ির কাঁটা পেছাতে পারে না, তাহলে সরকারকে আমরা কি বলবো। আমি কোনো জবাবই দিতে পারিনি।
নারী। ঢাকা শহরে গার্মেন্টস শ্রমিক বাস করে প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। অনেক গার্মেন্টসই ভোর আটটা থেকে কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে গার্মেন্টসে বা অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে যে সব নারীকে কাজ করতে আসতে হবে, তাদের দুর্ভোগ কতটা বেশি তা চিন্তা করলেই শিউরে উঠতে হয়। প্রথমত নারী মানে তার স্বামী আছে, সন্তান আছে, সংসার আছে। কাজে যখন তাকে যেতে হবে সবাইকে গুছিয়েই সে কাজে যাবে। কর্মক্ষেত্র গার্মেন্টস যদি দূরে কোথাও হয় আগেই তাকে রওনা দিতে হবে। অর্থাৎ পোনে আটটায় যেখানে সূর্য উঠবে সেখানে তাকে সাতটায়ই কর্মক্ষেত্রে রওনা দিতে হবে। তখন চারদিকে অন্ধকার, রিকশা নেই, চলাচলের কিছু নেই, সে মহিলাটি কিভাবে কর্মক্ষেত্রে যাবে। কিভাবে ম্যানেজ করবে তার গোটা পরিবার।
আমি জানি না সরকার বা কর্তা ব্যক্তিরা কি করছে। যে সরকার জনগণের কল্যাণে এসেছে, সে সরকার কিভাবে নাগরিক দুর্ভোগ সহ্য করবে। সরকার যে বিদ্যুতের দোহাই দিয়ে ডে লাইট সেভিং টাইম কার্যকর করেছে সে বিদ্যুতের বাস্তব কোনো উন্নতি আমরা দেখিনি। লোডশেডিং আগের মতোই। আসলে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে সেটি দেখার বিষয়। আর যতটা সাশ্রয় হচ্ছে তা নাগরিক দুর্ভোগের চেয়েও কতটা বড় বিষয় তা দেখা উচিত।
তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। মৌলিক নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের দেশ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এ পাঁচটি মৌলিক মানবাধিকার পাচ্ছে না সকল মানুষ। যাদের খাওয়ার ব্যবস্থাতেই জীবন শেষ। ডে লাইট সেভিং টাইম দিয়ে তারা কি করবে। সরকারের প্রাধান্য খাতগুলো দেখা উচিত। অযথা এ সময়ের বাস্তবায়ন কোনোই প্রয়োজন ছিল না। ২০০৭ সালে একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ সময়কে এগিয়ে আনার চিন্তা করছিল, কিন্তু বাস্তবতা দেখে তারা অগ্রসর হয়নি। এ সরকার যেহেতু ঘোষণা দিয়েই কয়েকদিনের মধ্যে তা করে ফেলেছে। এখন সরকারের ভাবার সময় এসেছে। সরকার যদি সত্যিই ডে লাইট সেভিং টাইম চায়, সেটা বাস্তবতার আলোকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শীতে এক সময় আর গ্রীষ্মে একসময় নির্ধারণ করতে পারে। যেহেতু গ্রীষ্মে আমাদের দিন বড় থাকে গ্রীষ্মকালেই ডে লাইট সেভিং টাইম থাকবে। সেটার অবশ্য নির্দিষ্ট তারিখ থাকবে। এমন হতে পারে এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর। অথবা আদৌ আমাদের দেশে এ সময়ের কোনো প্রয়োজন আছে কি না সেটাও ভাবতে হবে। এখন অনেক দেশ এই ডে লাইট সেভিং টাইম হতে বের হয়ে গেছে। চীন বের হয়ে এখন তাদের দেশে ওয়ান টাইম জোন চালু করেছে। প্রতিবেশী ভারতও এটি অনুসরণ করে না। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেও আগে ছিল কিন্তু এখন নেই। এসবের মূল কথা হলো আমাদের আগের সময়ে ফিরে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত। বিশেষ করে এখন তো সেটা জরুরি হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে ঘড়ির কাঁটা সরকারকে পেছানোই উচিত। কিন্তু সরকারের যা বক্তব্য তাতে বোঝা যাচ্ছে সরকার এ সময়ের পরিবর্তন করবে না, ঘড়ির কাঁটাকে পিছাবে না। তার কারণ আমরা জানি না। সরকার জনদুর্ভোগ কমাবে কি না, তার বিচার সরকারের হাতেই রইলো। য়